বাংলাদেশি পর্যটক না থাকায় ধুঁকছে কলকাতা, বিক্রি কমেছে ৬০ শতাংশ
- বাংলাদেশি পর্যটক কমায় কলকাতার নিউ মার্কেটে বিক্রি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ
- গত এক মাসে আগের তুলনায় এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে রোগির সংখ্যাও
চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক : জুলাই মাসের আগেও বাংলাদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর ছিলো পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিউ মার্কেট, মার্কুইস স্ট্রিটসহ বিভিন্ন স্থানগুলো। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই ভাটা পড়েছে কলকাতার পর্যটনে। খবর বিবিসি বাংলা।
বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর থেকে ভারতে কমে গেছে বাংলাদেশি পর্যটক। জুলাই মাস থেকে ভারতে বাংলাদেশিদের যাওয়া কমে গেলেও আগস্ট থেকে তা একরকম বন্ধই হয়ে গেছে।
আগস্ট জুড়ে যারা কলকাতায় গেছেন তার অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। শেখ হাসিনার মতো তারাও নিজেদের রক্ষা করতে দেশটিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে কলকাতা একরকম বাংলাদেশি পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে শুধু মাত্র মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে অথবা আগে থেকে যাদের ভিসা নেওয়া ছিল সেসব বাংলাদেশি কলকাতা যেতে পারছেন। বাংলাদেশি পর্যটক একেবারে কমে যাওয়ায় বিশাল ধাক্কা খেয়েছে কলকাতার কিছু এলাকার ব্যবসা। এসব এলাকায় হোটেল রুম প্রায় ফাঁকা থাকছে, ব্যবসায় ভাটা পড়েছে, কমেছে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এসব খাতের সঙ্গে যুক্ত মানুষের জীবিকা। নিউ মার্কেট এলাকায় বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
ভারতে বাংলাদেশিদের যাওয়া কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা সেন্টার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর এখনও বাংলাদেশে ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ চালু করেনি। সে কারণে যারা আগে থেকে ভিসা নিয়ে রেখেছেন এবং জরুরি চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন, তারাই ভারতে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন।
হোটেলের ঘর প্রায় ফাঁকা
মার্কুইস স্ট্রিট এলাকাটি বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে অতি পরিচিত এলাকা। এই এলাকার বহু হোটেল রেস্তোরাঁ মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপরে নির্ভর করেই ব্যবসা করে থাকে। তবে জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে বাংলাদেশিদের আসা কমে গিয়েছিল। আর অগাস্ট থেকে তা একরকম বন্ধই হয়ে গেছে।
মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল মালিকদের সংগঠনের নেতা মনোতোষ সরকার বলেন, “কয়েক মাস আগেও কলকাতার হোটেলগুলির ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ অকুপেন্সি রেট ছিল। এখন সেটা নেমে এসেছে মাত্র ৩০ শতাংশে। অর্থাৎ হোটেলগুলিতে ১০০টি ঘর থাকলে এখন মাত্র ৩০টি ঘরে পর্যটক থাকছেন।
কতদিন এই অবস্থা চলবে, তা অনিশ্চিত। তাই অন্য কোনও অঞ্চলের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যায় কী না, সে ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা শুরু করছেন মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল ব্যবসায়ীরা।
ফাঁকা নিউ মার্কেট, বিক্রিতে মন্দা
কলকাতার এসএস হগ মার্কেট, যা মূলত নিউ মার্কেট বলে পরিচিত। এই মার্কেটের এবং আশপাশের দোকানগুলোতে সারা বছরই বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। বেড়াতে গেলে বা চিকিৎসার জন্য গেলে, যে কারণেই হক বেশিরভাগ বাংলাদেশি পর্যটকই কলকাতায় গেলে নিউ মার্কেটে কেনা কাটা করতে যান
কিন্তু এক মাস ধরে বাংলাদেশি পর্যন্ত প্রায় না আসায় এসব দোকানগুলোর ৬০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন নিউ মার্কেটের দোকান মালিকদের সংগঠনের প্রধান অশোক গুপ্তা।
নিউ মার্কেটের কাছাকাছি আরও যে কয়টি বড় শপিং মল বা বড় বড় দোকান আছে, সেখানেও একই পরিস্থিতি বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কমেছে পর্যটক। আবার কলকাতায় আরজি করের ঘটনার পর থেকে সেখানেও চলছে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। যার ফলে স্থানীয় ক্রেতার সংখ্যাও কম। যার কারণে এবারের কেনাকাটার মৌসুম পুরোই লস বলে জানান তিনি।
রোগী কমেছে হাসপাতালেও
বাংলাদেশ থেকে একটা বড় অংশই ভারতে যান চিকিৎসার কারণে। কলকাতা, ভেলোর, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বাইয়ের অনেক বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশের বহু মানুষ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যান। এমনকি এসব হাসপাতালে বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা সার্ভিস-ডেস্কও থাকে।
তবে কলকাতার যেসব বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীরা বেশী সংখ্যায় আসেন, সেই হাসপাতালগুলো বলছে গত একমাসে খুব কম রোগী সেদেশ থেকে এসেছেন। যদিও ভারতের হাইকমিশনগুলোতে মেডিক্যাল ভিসা দেওয়া হচ্ছে, তা সত্ত্বেও আগের তুলনায় অনেক কম সংখ্যক রোগী যাচ্ছেন কলকাতার হাসপাতালগুলিতে।
মনিপাল হসপিটালসের অধীনস্থ হাসপাতালগুলোতে প্রতি মাসের গড়ে ২১০০ জন বাংলাদেশি রোগী আসেন। কিন্তু গত এক মাসে সেই সংখ্যা প্রায় এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। গত দু মাস আগে যত রোগী আসতেন এই সংখ্যাটা তার থেকে অনেক কম বলে জানিয়েছে হাসপাতালটির কর্মকর্তারা।
কলকাতার ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকার হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীদের ভিড় সবথেকে বেশি দেখা যায়। সেখানে বাংলাদেশীদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে থাকা-খাওয়ার হোটেল, ওষুধের দোকান– সব মিলিয়ে প্রায় লাখ খানেক মানুষের রোজগার চলে ওই হাসপাতালগুলিকে কেন্দ্র করে।
কলকাতার রোগীদের ভিড় সেখানে স্বাভাবিক থাকলেও এদের একটা বড় অংশ নির্ভর করে বাংলাদেশি রোগীদের ওপরে। তাই বাংলাদেশ থেকে পর্যটক বা রোগী আসা যতক্ষণ না স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন এই বিরাট সংখ্যক মানুষের অনিশ্চয়তা কাটছে না।