শিরোনাম

বাউফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ, হাসপাতালে স্যালাইনের সংকটসহ নানা সমস্যা

Views: 66

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: তীব্র গরমে হঠাৎই পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এরই জেরে হাসপাতালে দেখা দিয়েছে স্যালাইনের সংকট। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা খরচা করে বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে রোগী এবং তাদের স্বজনদের।

ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশি রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেড সংকট থাকায় বাধ্য হয়ে মেঝেতে ঠাঁই নিচ্ছেন বহু রোগী।

এদিকে, অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

আরো পড়ুন : কলাপাড়ায় দখলদার মুক্ত হলো মাছের পাইকারি বাজার

গত সোমবার রাতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়। নাম রিনা, বয়স ৭ বছর। সে উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামের রহিম গাজীর মেয়ে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুটি তিন দিন আগে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়। পরিবারের লোকজন হাসপাতালে না এনে বাড়িতে রাখেন। সোমবার রাতে তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। যথাসময়ে চিকিৎসা পেলে শিশুটি বেঁচে যেত।’ 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাব বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, মার্চের মাঝামাঝি থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। গত এক মাসে ৩৮৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত সাত দিনে ভর্তি হয়েছেন ৯৬ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালের বর্হিবিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে গত সাত দিনে দেড় শতাধিক রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গছে। এসব রোগীর প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু ও বয়স্ক।

তবে উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও তিনগুণ বেশি বলে দাবি করেছেন একাধিক চিকিৎসক।
তাদের ভাষ্যমতে, হাসপাতালে বেড সংকট থাকায় অনেক রোগী হাসপাতালে আসছেন না। তারা স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বিভিন্ন চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।

আজ, (বুধবার) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলায় শিশু, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে বেড খালি না থাকায় মেঝেতে অনেকেই বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেঝেতেও জায়গা না হওয়ায় এক শিশুসন্তানকে স্যালাইন দেওয়া অবস্থায় কোলে করে দাঁড়িয়ে আছেন এক মা।

উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ থেকে আসা মরিয়ম বেগম (২৬) নামে ওই নারী জানান, সোমবার থেকে তার আড়াই বছরের শিশুসন্তান বারবার পাতলা পায়খানা করছে। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক তার সন্তানকে স্যালাইন দেন। তবে হাসপাতালে জায়গা না থাকায় সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

মেঝের নোংরা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গাদাগাদি করে অবস্থান নিতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। তীব্র গরমে ফ্যান না থাকায় হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন রোগীর স্বজনরা। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা।

সমীর শীল নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘কোনো বেড থালি না থাকায় মেঝেতেই বিছানা পেতে থাকছি। তবে মেঝের চারপাশে নোংরা পরিবেশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছেন। এতে একদিকে দুগর্ন্ধ, অন্য তীব্র গরমে রোগীর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।’

আরো পড়ুন : বুড়াগৌরাঙ্গ নদের ভাঙন থেকে বাঁচতে শতাধিক পরিবারের আকুতি

হঠাৎ করে উপজেলা জুড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের সংকটও দেখা দিয়েছে। সরকারি হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় কম স্যালাইন সরবরাহ থাকায় বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে রোগীদের। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চড়া দামে স্যালাইন বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রোগীর স্বজনরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে দুই একটি স্যালাইন দেওয়া হয়। বাকি স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হয়। এতে স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা ১০০ টাকার স্যালাইন ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ‘হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সরবরাহ না থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ২০০ ব্যাগ স্যালাইন দিয়েছি। তা দিয়েই চিকিৎসা চলছে। আরও ২০০ ব্যাগ অর্ডার দিয়েছি। সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেবেন।’

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *