চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক :: বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) আগামী অক্টোবরের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন দুই মেয়াদে সংস্থাটির সহ-সভাপতি পদে থাকা তাবিথ আউয়াল।
২০১২ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তাবিথ আউয়াল। ২০২০ সালের নির্বাচনে ‘নাটকীয়তার’ পর হেরে যান তিনি। এবার তাবিথ ঘোষণা দিলেন, বাফুফের আগামী অক্টোবরের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়াইয়ের।
বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন শুরুর দিকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও পরে অবস্থান বদলে জানান নির্বাচন না করার কথা। সেই থেকে প্রশ্ন উঠছে, দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার হাল আগামীতে ধরবেন কে?
এরই মধ্যে তরফদার রুহুল আমিন আগামী ২৮ অক্টোবরের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে একই পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন তাবিথও।
“২০২০ সালে যখন আমি নির্বাচন করি, জিততে পারিনি, কিন্তু আমি সবসময় ফুটবলের সাথেই ছিলাম। ছোটবেলায় আমি ফুটবল খেলেছিলাম, (সংগঠক হিসেবে) অনেকগুলো দলকে সমর্থন দিয়েছি, দুইটা দলকেও এগিয়ে নিয়েছি, একটা ফেনী সকার ও বর্তমানে নওফেল স্পোর্টিং ক্লাব। দুই দলই কিন্তু জেলা পর্যায় থেকে উঠে আসা। ফুটবলের অন্যান্য জায়গাতেও যেখানে প্রয়োজন ছিল, সেখানে জড়িত ছিলাম। আমার প্রতিশ্রুতি ছিল, এই ক্রীড়াঙ্গণ থেকে আমি সরে যাচ্ছি না, সরে যেতেও চাই না। কেননা, আমার আত্মা খেলার সাথেই জড়িত। আমি যদিও অনেক খেলা খেলি, কিন্তু (সংগঠক, পৃষ্ঠপোষক, সমর্থক হিসেবে) আমি শুধু ফুটবলের সঙ্গেই জড়িত।”
“আপনারা অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, ফুটবল ফেডারেশনের আগামী নির্বাচনে আমি অংশ নেব কিনা? হ্যাঁ, আমি অংশ নেব। বিগত তিনটা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম, এবার চতুর্থবারও আমি অংশ নিতে আগ্রহী এবং নির্বাচনে অংশ নিব। প্রশ্ন হচ্ছে কোন পদে নিব, বর্তমান সংবিধানের অধীনে আমি সভাপতি পদে নির্বাচন করব। আমি আশাবাদী, নির্বাচনে লড়লে আমি জিতব এবং জিতলে ফুটবলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারব।”
২০২০ সালের নির্বাচনে চার সহ-সভাপতির একটি পদে মহিউদ্দিন মহির সাথে সমান ৬৫টি করে ভোট পান তাবিথ। পরে ওই একটি পদে পুনরায় নির্বাচন হয়, সেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ৬৭-৬৩ ভোটে হেরে যান তিনি। এবার জিতলে বাফুফের গঠনমূলক পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত তাবিথ দিয়েছেন অতীতের কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে।
“ফুটবল নিয়ে আমার ভাবনা কী, এ সংক্রান্ত বিষয়ে আপনারা হয়ত আমাকে প্রশ্ন করবেন। আমি আজ আমার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। নির্বাচনী প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে অক্টোবরে, তখন নির্বাচনী ইশতেহার কী হবে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি হবে, প্যানেল হবে কিনা-সেগুলো আপনাদের জানাব।”
“আমি যে মেয়াদে ছিলাম, স্বাধীনভাবে কাজ করেছি। কোনো বাধা পাইনি। দ্বিতীয় মেয়াদে টেকনিক্যাল কমিটি পূর্ণগঠন করেছিলাম, প্রায় ৪০০ লাইসেন্সধারী কোচ তৈরি করেছিলাম, আগে যে সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০ জন। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ না পেলে, এরকম একটা পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করা যেত না।”
সাম্প্রতিক সময়ে বাফুফের নানা কর্মকাণ্ড হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফিফা। বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীসহ একাধিক কর্মকর্তাকে জরিমানা করেছে বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থাটি। নির্বাচিত হলে বাফুফেতে স্বচ্ছ্বতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও দেন তাবিথ।
“২০২০ সালে আমি নির্বাচনে পাস না করলেও অভিযোগগুলো এসেছিল। ট্রান্সপারেন্ট হওয়া..যে বিষয়গুলো দুর্নীতি দমন কমিশন, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে, ফিফা তদন্ত করেছিল, সেগুলো পুনরায় তদন্ত করার মানে হয় না। তবে যেগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে, সেখানে ধারাবাহিকতা রেখে আমরা সম্পন্ন করব। নির্বাচনী ইশতেহারের ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে চাইছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি সভাপতি হলে খেলার মাঠে চমক দেখাব। আশা করি, ফুটবলকে পরের ধাপে নিতে পারব।”
তরফদার রুহুল আমিনের প্রার্থিতা ঘোষণার অনুষ্ঠানে ছিলেন বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক। তাবিথও বিএনপির সঙ্গে জড়িত, দলটির জাতীয় কমিটিতে আছেন। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দুইবার মেয়র পড়ে লড়েছেন। সেক্ষেত্রে ঐক্যমতের প্যানেল হবে কিনা, এমন প্রশ্নে কৌশলী উত্তরই দিয়েছেন তাবিথ।
“আমিনুল হককে শুধু দলের (বিএনপি) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক হবে না। তিনি সাবেক ফুটবলার। সাফজয়ী দলের সদস্য। কেউ চাইলে কাউকে সমর্থন দিতেই পারেন। এটা উন্মুক্তই আছে। আমরা সবাই যারা ফুটবল খেলেছি, ক্রীড়াঙ্গণের মানুষ, তারা কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভালোবাসে। যারাই মনে করবে, তারা নির্বাচন করার যোগ্য, তারা নির্বাচন করবে, তাদেরকে আমি স্বাগত জানায়, প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই ভালো নেতা তৈরি হতে পারে বলে আমি মনে করি।”