শিরোনাম

বিলাসিতা কমিয়ে শ্রমিকদের দিকে নজর দিন : শেখ হাসিনা

Views: 38

চন্দ্রদ্বীপ নিউজ : মালিকদের বিলাসিতা কমিয়ে শ্রমিকদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে, তাদের ন্যায্য পাওয়া বঞ্চিত করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

আজ (১ মে) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মে দিবস উপলক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতে শ্রমের অধিকার আদায়ে মহান মে দিবসে আত্মত্যাগকারী শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে, তাদের ন্যায্য পাওনা বঞ্চিত করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

“শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কাজ শুরু করেছিলেন এদেশে। দেশের মানুষের বৈষম্য তিনি দূর করতে চেয়েছিলেন। এই অঞ্চলের কোনো শিল্প কারখানা ছিল না। যুদ্ধের পর এই দেশ ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত। মা যেমন একজন রুগ্ন সন্তানকে লালন-পালন করে সুস্থ করেন, তেমনি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ গড়ে তুলে শ্রমিকের কর্মসংস্থানসহ জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করেছিলেন। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও-এর সদস্যপদ লাভ করেন।”

শেখ হাসিনা বলেন, “কেউ যদি শ্রমিকদের ন্যায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে সে যেই হোক না কেন, যত বড়ই হোক না কেন, যদি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি হলেও আমরা ছাড়ি না, ছাড়বো না। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে, তাদের ভালো মন্দ দেখতে হবে।”

শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে এবং সহজলভ্য করতে ট্যাক্স তুলে দিয়েছি। যাতে শিল্প কারখানা নিরাপদ হয়। আজ সারা বিশ্বের মধ্যে সেরা ১০টি গ্রিন শিল্প কারখানা বাংলাদেশে।”

শ্রমিকদের দুঃসময়ে সরকার সবসময় পাশে থেকেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, “মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট। বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ এমন কিছু নেই যাতে আগুন দেয় নাই। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। বিনাখরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। শ্রমিকদের কল্যাণ দেখা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।”

রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সেবা দিতে কেন্দ্রীয় কল্যাণ গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।”

করোনার পর রাশিয়ায়-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সম্প্রতি ফিলিস্তিনির ওপর ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডে সারা বিশ্বের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব এবং মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশের শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান যাতে ভালো থাকে সেজন্য সবার বেতন আমরা পাঁচ ভাগ বাড়িয়েছি। সেখানে শ্রমজীবী মানুষের জন্য আমরা এই হার ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত করেছে। শুধু গার্মেন্ট শিল্প কারখানা নয় ৪২টি সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।”

এ সময় শ্রমিকদের প্রতি মালিকের এবং মালিকের প্রতি শ্রমিকের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে প্রতিষ্ঠান আপনাদের কাজের সুযোগ করে দিয়েছে, রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে দিয়েছে, সেখানে আপনাদেরও যেমন দায়িত্ব আছে, সেই সঙ্গে মালিকদেরও দায়িত্ব আছে যে শ্রমিকরা তাদের শ্রম দিয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে, জীবন জীবিকাকে উন্নত করা বা বিলাসবহুল জীবন যাপন করার সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের দিকে বিশেষ নজর দেবে সেটাই আমি চাই। বিলাসিতা কিছুটা ছেড়ে দিয়ে শ্রমিকরদের দেখবেন।”

মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশটা আমাদের সবার। এ দেশ যত উন্নত হবে, ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। কারখানা মালিকরা নতুন নতুন বাজার পাবে, তারা লাভজনক হবে। আমাদের শ্রমিকরাও ভালো জীবন পাবে।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “শ্রমিকরা নিরাপদে, সুষ্ঠু পরিবেশে কাজ করবে। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। কোনো বৈষম্য থাকে না। বৈষম্যহীন একটা সমাজ আমরা চাই। এভাবে শ্রম আর মাটি, মানুষদের নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো।”

শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৯৬ সালে মজুরি আটশ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা করেছিলাম। ২০০৯ সালে আমি যখন সরকার গঠন করলাম তখন দেখলাম ১৬৬২ টাকা মাত্র মজুরি পায়। তখন আমি নিজে মালিকদের ডেকে কথা বলেছিলাম, তখন তাদের মজুরি ১৬শ টাকা থেকে ৩ হাজার ২শ টাকায় বৃদ্ধি করি। ২০১৩ সালে একই কারণে পুনরায় আবার ৫ হাজার ৩শ টাকায় উন্নীত করেছিলাম।

শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি আমাদের দেশে কিছু ভাড়াটিয়া লোক; আমি বলবো, কথায় কথায় তারা শ্রমিকদের নিয়ে রাস্তায় নামার চেষ্টা করে। শ্রমিকদের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করছে, কাজের ব্যবস্থা করছে, জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করছে। সেই কারখানা নিজেরা যদি ধ্বংস করতে চান। ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া সেই ধরনের কাজ যদি করে তাহলে ক্ষতি কার হচ্ছে। নিজের ক্ষতি হচ্ছে পরিবারের ক্ষতি হচ্ছে। মালিকদেরও ক্ষতি হচ্ছে। মালিকদের তো একটা ব্যবসা থাকে না, তারা অন্য ব্যবসা থেকে পুষিয়ে নিতে পারেন। তাহলে ক্ষতি কার হচ্ছে নিজেদের ক্ষতি হচ্ছে। “আপনাদের কোনো অসুবিধা যদি হয়, আমার দুয়ার খোলা।”

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মো. মাহবুব হোসেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এম ইব্রাহীম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি আরদাশীর কবির, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর কুতুব আলম মান্নান।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *