বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) কর্তৃক প্লান অনুমোদনে জটিলতা ও হয়রানির প্রতিবাদে ১১টি দাবি তুলে ধরে রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে বরিশাল নাগরিক অধিকার অন্দোলনের আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। আগামী সাতদিনের মধ্যে দাবিগুলো মেনে না নিলে পরবর্তীতে বিক্ষোভ সমাবেশ, সিটি করপোরেশন ঘেরাও, অবস্থান ধর্মঘট, গণঅনশনসহ কঠোর কর্মসূচী গ্রহণের হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সদস্য সচিব প্রকৌশলী মো. আবু ছালেহ বলেন, নগরবাসী প্রায় দেড় বছর ধরে প্লান অনুমোদনে জটিলতা থাকায় হাজার হাজার নির্মাণ শ্রমিক, জমির মালিক, ব্যবসায়ী, ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেক্টবৃন্দসহ নানা পেশার মানুষ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ইতোমধ্যে বরিশাল নাগরিক অধিকার অন্দোলনের পক্ষ থেকে গত ২৪ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বরাবর ১১ দফা দাবি তুলে ধরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার আলোচনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। যেকারণে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এসোসিয়েশন অব বিল্ডিং কনসালটেন্ট, বরিশাল ডেভেলপার এসোসিয়েশন, সিমেন্ট ও লৌহজাত ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, ইলেকট্রিশিয়ান শ্রমিক ইউনিয়ন, জমির মালিকগনসহ নানা পেশার লোকজন মিলে গত ১৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের সামনে মানববন্ধন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করা হয়। তারাও এ অন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। দাবিগুলো হল-বরিশাল সিটি করপোরেশনে জমা থাকা সকল প্লান অনতিবিলম্বে অনুমোদন দিতে হবে। ইতোমধ্যে পাশকৃত সকল প্লান (যাহার চালান, হোল্ডিং এবং পানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে) তা ডেলিভারি দিতে হবে। বরিশাল শহরের অধিকাংশ রাস্তার প্র্রশস্ততা কম তাই রাস্তার প্রশস্ততার ক্ষেত্রে গতানুগতিক ও প্রচলিত নিয়মে প্লানের অনুমোদন দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের চতুর্থ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত বরিশাল ইমারত নির্মান নীতিমালা-২০২০ পূর্ণবহাল করতে হবে। দুর্নীতি ও অনিয়মরোধে প্লান অনুমোদনসহ সকল ধরনের সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
অতি পুরাতন অকার্যকর মাষ্টার প্লান (যাহা ২০২০ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে) তার অযুহাত দিয়ে রেড জোন, শিল্পাঞ্চল জোন, কৃষি জোন, ইকোপার্ক জোন দেখিয়ে জনগনকে যে হয়রানী করা হচ্ছে তা লাঘব করে অকার্যকর ও মেয়াদোত্তীর্ণ পুরাতন মাষ্টার প্লান বাতিল করতে হবে। ইমারত নির্মান বিধিমালা-১৯৯৬ এর আওতায় প্লান অনুমোদনের কথা বললেও কর্তৃপক্ষ কেবল মাত্র রাস্তার ক্ষেত্রে উক্ত বিধিমালা অনুসরণ করে কিন্তু প্লান পাশের ফিসহ অন্যান্য বিষয়ে মনগড়া আইন বাস্তবায়ন করছেন তাই স্ক-বিরোধী এ নিয়ম বাতিল করতে হবে। যে সমস্ত এলাকায় কিংবা বাড়িতে পানির সরবরাহ লাইন সংযোগ করা হয়নি, সেই সব এলাকার জনগনকে পানির বিল হইতে অব্যহতি দিতে হবে। ভবনে বসবাস শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স ও পানির বিল নেওয়া বন্ধ করতে হবে। পূর্বে ভরাটকৃত ব্যক্তিগত রেকর্ডিয় জমির শ্রেনীতে পুকুর উল্লেখ থাকলে প্লান অনুমোদন প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত না করে সরেজমিন তদন্ত করে প্লান অনুমোদন দিতে হবে। খালের পাড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের রেকর্ডিয় জমির ক্ষেত্রে ইমারত নির্মানে জমি ছাড়ের ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত ও বান্ধন ভিত্তিক সমাধান করতে হবে।
অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বরিশাল নাগরিক অধিকার আন্দোলন কমিটির আহবায়ক মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য প্রকৌশলী এএফএম হারুন-অর রশীদ, যুগ্ম আহবায়ক নিয়াজ মাহমুদ, প্রকৌশলী আকতার হোসেন, আনোয়ার হোসাইন খান, যুগ্ম সদস্য সচিব ডিজাইনার রিয়াদুল আহসান, গোপাল চন্দ্র সাহা, সোহেল রানা, সদস্য প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির, প্রকৌশলী শাহ আলম সিকদার, প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন, আমিনুল ইসলাম বাচ্চুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
মো: তুহিন হোসেন,
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম