২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাত ৩টায় ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার ফলে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সময় ঢাকা গ্রীন লাইফ মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কুশল কর্মকারও onboard ছিলেন। তিনি এবছর ঢাকা গ্রীন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের সাথে ওই দিনটির অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন কুশল কর্মকার। তিনি জানান, লঞ্চে আগুন লাগার পর তার চোখের সামনে মানুষ পুড়তে থাকে এবং নিজের শরীরও আগুনের তাপে দগ্ধ হয়। এই সময়েই জীবনকে ঝুঁকিতে রেখে দগ্ধ অবস্থায় মাঝ নদীতে ঝাঁপ দেন কুশল।
ঘটনার রাতে কনকনে শীতের মধ্যে সুগন্ধা নদীতে একটানা ৪৫ মিনিট সাঁতার কাটেন কুশল এবং অবশেষে মৃত্যুপুরী থেকে প্রাণে বাঁচেন। তিনি বলেন, “মাঝরাতে হঠাৎ বিকট শব্দ, মানুষের চিৎকার আর ছোটাছুটিতে আমার ঘুম ভাঙে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের শরীরে আগুন জ্বলছিলো, আর অনেক মা শিশুদের নিয়ে সাঁতার না জানার কারণে লঞ্চ থেকে লাফিয়ে পড়তে পারেনি। তারা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।”
লঞ্চটিতে ছিল না কোনো সুরক্ষাসামগ্রী বা লাইফ জ্যাকেট, যার ফলস্বরূপ বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কুশল আরও বলেন, “আগুনের উত্তাপে আর থাকতে পারছিলাম না, তখন পোশাক খুলে ফেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাফ দিই নদীতে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় সাঁতার কেটে তেলবাহী জাহাজের কাছে পৌঁছাই। জাহাজের লোকজন আমাকে গরম পোশাক পরিয়ে নেয় এবং উদ্ধারকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে যায়।”
কুশলের বাবা কৃষ্ণ কর্মকার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “ঈশ্বরই আমার ছেলেকে বাঁচিয়েছে। ঈশ্বর বাঁচালে কেউ মারতে পারে না।”
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা সদরঘাট থেকে প্রায় ৪০০ যাত্রী নিয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি যাত্রা শুরু করে। পরের দিন রাত ৩টায় ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুন ধরে যায় এবং পরে লঞ্চটি নদীর তীরে ভেড়ানো হয়। অনেক যাত্রী প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা যায়, দগ্ধ হয় শতাধিক এবং ৪৯ জন মারা যায়।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম