পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: ঈদুল আজহার চতুর্থ দিনেও পটুয়াখালীর পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় পর্যটকের ঢল নেমেছে। সকাল থেকে টানা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই সমুদ্র বিলাসে মেতেছে নানা বয়সী মানুষ। ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের তুলনায় দ্বিগুণ পর্যটকের আগমন ঘটেছে। সৈকতের জিরো পয়েন্টের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আগত দর্শনার্থীদের পদচারণায় আনন্দ উন্মাদনা ছিল লক্ষণীয়। বৃষ্টিভেজা শরীরেও থেমে ছিল না দর্শনীয় স্পটে ঘুরে বেড়ানো। আবাসিক হোটেল-মোটেল রিসোর্টগুলোর প্রায় ৮০ ভাগ কক্ষই বুকিং রয়েছে। এমন ভিড় থাকবে আগামী শনিবার পর্যন্ত এমনটাই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
অতিরিক্ত গরমে পর্যটক খরা কাটিয়ে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক ভ্রমণ প্রিয় মানুষের আগমন ঘটেছে ঈদের ছুটিতে। তবে কাঙ্ক্ষিত পর্যটকের আগমনে আবাসিক ও খাবারসহ তিন চাকার যান চালকরা এর সুফল ভোগ করলেও অন্যান্য পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বৃষ্টির প্রকোপে বঞ্চিত হয়েছেন।
অপরদিকে সৈকতে প্রবেশের প্রধান ফটকের সড়কের দুই পাশে বিশৃঙ্খলভাবে রাখা যানবাহন ও সৈকতের মূল কেন্দ্রে যত্রতত্র যানবাহনের অবাধ বিচরণ ঠেকাতে কোনো তদারকি লক্ষ্য করা যায়নি। এতে পর্যটকদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে কুয়াকাটা বাস টার্মিনাল থেকে সৈকতে আসতে বাড়তি ভাড়া আদায়সহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় পর্যটকদের। আর এসব নিরসনে প্রশাসনের নেই কোনো দায়িত্বশীল ভূমিকা। ইজিবাইক চালকদের বেপরোয়া উৎপাত এবং অসংলগ্ন আচরণে পর্যটকরা রীতিমতো হতাশ। খাবার হোটেলগুলোয় খাবারের দাম ও মান নিয়েও পর্যটকদের রয়েছে নানা আপত্তি। এতে করে অনেকেই কুয়াকাটা ভ্রমণ বিমুখ হচ্ছেন। অপরদিকে আবাসিক হোটেলে গলাকাটা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল সমুদ্র সৈকত এলাকা। তবে হঠাৎ করেই বৃষ্টির প্রকোপে কমতে শুরু করে পর্যটকের সংখ্যা। একটানা বৃষ্টিতে বাধ্য হয়ে অনেকেই কুয়াকাটা ত্যাগ করবেন বলে পর্যটকের সাথে কথা বলে জানা গেছে। আবার অনেকেই উত্তাল সমুদ্রের সঙ্গে বৃষ্টির আমেজ পেয়ে আনন্দ উন্মাদনায় জমে উঠেছেন।
ঢাকার থেকে আগত পর্যটক নাজমুল ইসলাম বলেন, উত্তাল সমুদ্রের সঙ্গে বৃষ্টির পরিবেশ পেয়ে আনন্দের যেন এক ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। এভাবে পরিবেশ পাবো আশা করিনি। অনেক ভালো লেগেছে এবার কুয়াকাটায় ঘুরতে এসে।
সুনামগঞ্জের হাওর থেকে পরিবার নিয়ে আগত পর্যটক প্রসেনজিৎ বলেন, তিনদিনের জন্য কুয়াকাটা বেড়াতে এসেছি। অনেকবার কক্সবাজার যাওয়া হলেও এই প্রথমবার কুয়াকাটা এসেছি। তবে বৃষ্টির কারণে সেভাবে ঘুরে দেখার সুযোগ হয়নি। কোথাও বের হতে পারছি না। ভাবছি একদিন আগেই চলে যাবো। সমুদ্র উপভোগ ছাড়া আর কিছুই দেখাই হলো না।
পাবনা থেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসা পর্যটক ইসরাফিল জানান, অনেক টাকা খরচ করে বেড়াতে এসেছি। বৃষ্টি হচ্ছে তাই বলে কি ঘোরাফেরা মাটি হবে? যতই বৃষ্টি হোক না কেন আমরা বেশ আনন্দ উপভোগ করছি।
ঢাকার নারায়ণগঞ্জের পর্যটক নাজমুল জানান, বৃষ্টি আর উত্তাল সমুদ্রে দারুণ উপভোগ করলাম। তবে সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে দুই পাশটা ভয়ানক। জিও ব্যাগের ফাঁদে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি। এগুলোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রের সৈকত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এমনটা কখনোই আশা করা যায় না।
আরো পড়ুন : কুয়াকাটা সৈকতে বিরল প্রজাতির ‘ইয়েলো বেলিড সি’ সাপ
বরিশাল থেকে আগত পর্যটক দম্পতি রাইয়ান-কাকলি বলেন, ফেরি বিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় স্বল্প সময়ে কুয়াকাটা এসেছি। কয়েকদিন থাকবো। তবে কুয়াকাটার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও পাল্টায়নি এখানকার ব্যবস্থাপনা। পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যারা নতুন আসবে তারা অনেকেই বহুমুখী ভোগান্তির শিকার হবে। দ্রুত যদি এসব অব্যবস্থাপনাগুলো ঢেলে সাজাতে না পারে তাহলে কুয়াকাটা ভ্রমণে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিবেন। আশা করছি পর্যটনের গতিশীলতা বজায় রাখতে প্রশাসন বিশেষভাবে গুরুত্ব দিবেন।
সৈকতের আচার ব্যবসায়ী জহির রায়হান বলেন, এবারের ঈদে আমরা যেভাবে পর্যটক আগমনের আশা করেছিলাম তার থেকেও অনেক পর্যটকের এসেছে। তবে পর্যটক আসলেও গত দুই দিনের বৃষ্টিতে আমাদের তেমন ভালো বেচা বিক্রি হয়নি। বৃষ্টিতে অনেকেই দোকান বন্ধ করে রেখেছে।
সৈকতের ফটোগ্রাফার সাইফুল ইসলাম খলিফা জানান, এমন দিনে কয়েক হাজার টাকা ইনকাম হয়। আজ মাত্র ৭’শ টাকা আয় হয়েছে। তাতে অনেক কষ্ট করা লাগছে। এভাবে চললে আমাদের বাকি দিনগুলো পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে কষ্ট হয়ে যাবে।
আবাসিক হোটেল সী বিচ ইন এর ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল শুক্রবারের বেশ কিছু বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। তিনদিন বুকিং দেওয়া কিছু পর্যটক একদিন আগেই চলে যাবেন। আমরা এখন হতাশার মধ্যে পড়ে গেলাম।
আবাসিক হোটেল সৈকতের ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান জানান, ঈদের দিন থেকে তার হোটেলের সবগুলো কক্ষ আগাম বুকিং রয়েছে।
হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, আবাসিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে আশাতীত বুকিং রয়েছে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়ায় এখন কোনো পর্যটককে রুম সংকটে ভুগতে হয় না।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পর্যটকদের ভিড়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।