পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আতিকুল ইসলাম রুবেল (৩৪), সিএনজিচালক জাহাঙ্গীর খান (৪০), ব্যবসায়ী মামুন হাওলাদার (৪০), শিক্ষার্থী মো: রাসেল (১৮) এবং সাগর গাজী (২০)। নিহতদের অনেকেই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদেরকে হারিয়ে পরিবারগুলো এখন দিশেহারা।
গত ১৯ জুলাই বিকেলে ঢাকার মিরপুর এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ওপর পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আতিকুল ইসলাম রুবেল (৩৪)। ঢাকার বারিধারা এলাকায় জাস্টেক্স বায়িং হাউজে তিনি সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন। গলাচিপা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের রূপনগর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম মাস্টারের ছেলের রুবেলের উপার্জনেই সংসার চলত। আলিসবা ইসলাম ফারিস্তা নামে শহীদ রুবেলের ১৭ মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
স্ত্রী তামান্না কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ‘আমার স্বামীকে কেন মারা হলো? এর দায় কে নেবে?’
সিএনজিচালক জাহাঙ্গীর খান গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাউরিয়া এলাকার মৃত রত্তশন আলী খানের ছেলে। গত ২০ জুলাই দুপুরে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মমতাজ বেগম জানান, ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে তিনি এখন অথৈই সাগরে পড়েছেন তিনি।
উপজেলার চিকনিকান্দি ইউনিয়নের পানখালী গ্রামের মুজাফফর হাওলাদারের ছেলে মামুন হাওলাদার। নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার পাগলা বউবাজার এলাকায় বালুর ব্যবসা করতেন। গত ২২ জুলাই দিবাগত রাতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ফতুল্লা থানা পুলিশ মামুনকে ধরে নিয়ে যায়। থানায় পরে খোঁজ নিলে জানানো হয় মামুনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে গেলে মামুনের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।
মামুনের মায়ের প্রশ্ন, আমার সুস্থ ছেলেটারে পুলিশ ধরে নিয়ে মেরে ফেলল। এখন কে এ সংসারের হাল ধরবে?
উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে রাসেল ঢাকায় এসেছিলেন। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দেন তার বাবা আবুল হোসেন। গত ৫ আগস্ট সকালে ঢাকার দনিয়ার কাজলা এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন রাসেল। পরের দিন গলাচিপা উপজেলার চর কাজল ইউনিয়নচর শিবা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
সাগরের স্বপ্ন নিভে গেল মাত্র ২০ বছর বয়সে। গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের পূর্বপাড় ডাকুয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাগর। বড় প্রত্যাশা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। গত ৫ আগস্ট ঢাকার উত্তরায় জসিম উদ্দিন ফ্লাইওভার এলাকায় মাথায় গুলি লাগে সাগরের। নিভে গেল পরিবারের স্বপ্ন।
বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, গ্রামে মাত্র ৬০ শতাংশ জমি আছে তাদের। এখন তিনি কীভাবে সংসার চালাবেন?’
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, এখনো সরকারি কোনো অনুদান আসেনি। অনুদান পেলে সবাইকে দেয়া হবে।