শিরোনাম

ভরা বর্ষায় বরিশাল মহানগরীর ১৬৫টি রাস্তার কাজ শুরু

Views: 25

বরিশাল অফিস :: বরিশাল মহানগরীর ভাঙাচোড়া রাস্তাঘাট মেরামত ও পুননির্মাণ কাজ শুরু হলেও এর সুফল পেতে নগরবাসীকে আরো ৬ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ভরা বর্ষার মধ্যেই নগরীর ৫৫ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেনসহ যে ১৬৫টি ছোট-বড় রাস্তার নির্মাণ ও পুননির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে তার বেশিরভাগই মেকাডামের ওপর বিটুমিনাস কার্পেটিং হওয়ায় বর্ষার কারণে গুনগতমান রক্ষা করা দুরুহ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন অধিদফতরের প্রকৌশলীগণ। তবে নগর ভবনের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীগণ কাজের মানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপোষ করা হচ্ছে না এবং ভবিষ্যতেও হবে না বলেও মত প্রকাশ করেছেন।

বর্তমান নগর পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণের দিন কয়েক আগেই ‘জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক’-এর সভায় বরিশাল মহানগরীর ড্রেন, কালভার্ট ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ রক্ষণাবেক্ষণে ৭৯৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঐ বৈঠকে অনুমোদিত প্রকল্পটি ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদনসহ নতুন অর্থবছরের উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দও রাখা হয়েছে।

নগর ভবন থেকে ঐ অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষ ৩২২ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত ১৬৫টি রাস্তার পুননির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন ছাড়াও ৫৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু রাস্তার মেরামত ও সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে হলেও বেশিরভাগ রাস্তার কাজ শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। অনেকগুলো রাস্তার ম্যাকাডামের কাজ চলছে। কিন্তু গত ২৬-২৭ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর বয়ে আনা জলোচ্ছ্বাসসহ প্রবল বর্ষণে নির্মাণাধীন প্রায় সব রাস্তার বেডই পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। জুন মাসেও বরিশাল মহানগরীতে স্বাভাবিকের ৬০ ভাগ কম বৃষ্টি হলেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৯১ মিলিমিটার। চলতি মাসেও এ নগরীতে ৪২০ থেকে ৫৭০ মিলি পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। জুলাই-আগস্টকেই বরিশালে ভরা বর্ষার মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

কিন্তু আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্রের ভরা বর্ষার মধ্যে নগরী জুড়ে ১৬৫টি রাস্তার মেরামত, পুননির্মাণসহ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরুকে কারিগড়ি বিশেষজ্ঞ মহল আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বলে মনে করলেও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রকৌশলীগণ কঠোর নজরদারির কথা জানিয়েছেন।

নগর ভবনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো ইসরাইল জানান, যে ১৬৫টি রাস্তার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে বেশকিছু আরসিসি সড়ক রয়েছে। পাশাপাশি অনেক রাস্তার পাশে আরসিসি ড্রেন’ও রয়েছে। বর্ষার মধ্যে আমরা শুধু এসব আরসিসি’র কাজগুলোই করব। কোনো ধরনের বিটুমিনাস কার্পেটিং কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগের আগে করা হবে না। এক্ষেত্রে প্রকৌশল বিভাগের মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি কর্মীকে সতর্ক করে দেয়ার কথা জানিয়ে ঠিকাদারদেরও বর্ষার মধ্যে কোনো ধরনের বিটুমিনাস কাজ না করতেও বলা হয়েছে বলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।

পাশাপাশি তিনি চলতি অর্থবছরের শেষে বরিশাল মহানগরীর রাস্তাঘাট ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারমতে, মহানগরীতে ইতোমধ্যে যেসব উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে, বর্ষার পরে তা আরো গতিলাভ করবে। ডিসেম্বরের মধ্যে মহানগরীতে উন্নয়নের ব্যাপক কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হবে এবং চলতি অর্থবছরের শেষে এ নগরী ভিন্নরূপ লাভ করবে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের খাল সংস্কার এবং অবকাঠামো উন্নয়নে আরো দুটি ‘উন্নয়ন প্রকল্প সারপত্র-ডিপিপি’ পরিকল্পনা কমিশনের বিবেচনাধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপ লক্ষণীয় নয়। নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর শপথ গ্রহণের আগেই মৃত্যুবরণ করায় আইনি জটিলতায় সেখানে কোনো উপ-নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে এ ওয়ার্ডটির রাস্তাঘাটের উন্নয়ন দুরের কথা, জরুরি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজও বন্ধ রয়েছে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের রাজকুমার ঘোষ রোডটি ইতোমধ্যে যানচলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ মাত্র ৪শ’ মিটারের এ সড়কটিতে ৩টি স্কুল ছাড়াও একাধিক প্রতিষ্ঠান ও বিপুল সংখ্যক আবাসিক স্থাপনা রয়েছে। প্রায় দুবছর আগে এ সড়কটির সাথে সিএন্ডবি রোডর সংযোগটি বন্ধ করে জাতীয় মহাসড়কের ওপর নির্মিত একটি পার্কের প্রবেশ পথ নির্মাণ করে সাবেক নগর পরিষদ। সেখানে প্রায় ২শ’ মিটার বিকল্প সড়কের ম্যাকাডাম তৈরি করা হলেও তার ওপর কোনো কার্পেটিং করা হয়নি। অবশিষ্ট ২শ’ মিটারের বিটুমিনাস কার্পেটিং উঠে গিয়ে সেখানে ম্যাকাডামও সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এ সড়কটি দিয়ে পায়ে হেটে চলাও দুরুহ হয়ে পড়ছে। অথচ প্রতিদিনই অসংখ্য শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকগণ এ সড়কটি দিয়েই ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে গিয়ে মহাবিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।

এব্যাপারে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাশারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, রাজকুমার ঘোষ রোডের পরিপূর্ণ মেরামতসহ বিটুমিনাস কার্পেটিং-এর লক্ষে ঠিাকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করলেও তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *