শিরোনাম

ভরা মৌসুমেও ভোলায় ইলিশ মিলছে না,চরম সংকটে জেলেরা

Views: 17

বরিশাল অফিস :: আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র ইলিশের ভরা মৌসুম। অথচ আষাঢ়-শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্র এসে গেলেও ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। মাছঘাটগুলোতে নেই কোনও হাঁকডাক।

মাছ শিকার করতে না পেরে ঋণগ্রস্ত জেলেরা পড়েছেন মহা সংকটে। আবার গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। ফলে পাওনাদারের ভয়ে এলাকাছাড়া হয়েছেন অনেকে জেলে।

বুধবার দুপুরে ভোলা সদরের পূর্ব কালুপুর এলাকার জেলে লোকমান মিঞার সঙ্গে কথা হয় চন্দ্রদ্বীপ নিউজ২৪.কম বরিশাল অফিসের ।

তিনি জানান, আশা নিয়ে বারবার নদীতে নামেন তারা, কিন্তু মেলে না মাছ। বরং মাছ ধরতে গিয়ে যে খরচ হয় তার সিকি ভাগ টাকার মাছও পাচ্ছেন না তারা। ফলে দিন দিন বাড়ছে দেনার দায়।

তিনি জানান, গত প্রায় দুই মাসে তিনি প্রায় দুই লাখ টাকার দেনা হয়েছেন। আগের দেনা আছে দেড় লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেনা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন।

মাছ শিকার করতে না পেরে জীবনযাপন নিয়ে চরম সংকটের কথা উল্লেখ করেছেন একই এলাকার আরেক মৎস্যজীবী আবদুল জলিল মাঝি।

তিনি বলেন, স্থানীয় এক আড়তদারের কাছে দাদন নিয়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার করেছিলেন। পরে গত ২০ জুলাই স্থানীয় বাজার থেকে ডিজেল ও চাল-ডালসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে সাগর মোহনার হাতিয়া এলাকায় ইলিশ শিকারে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল সাত জন জেলে।

কিন্তু ২১ জুলাই ঝড়ের কবলে পড়ে তার ট্রলারটি ডুবে যায় এবং মারা যান তার সঙ্গে থাকা এক জেলে। তিনি অন্য জেলেদের সহযোগিতায় এলাকায় ফিরেছেন।

এখন নিঃস্ব এই জেলে আড়তদার, মুদি দোকানি, ডিজেল ব্যবসায়ীরা পাওনা পরিশোধের জন্য বেশি চাপ দিলে কী করবেন সেটা ভেবে দিশেহারা। তারা টাকার জন্য চাপাচাপি করলে এলাকা থেকে পালানো ছাড়া কোনও পথ থাকবে না বলে জানান এই মৎস্যজীবী।

সাধারণত জেলেরা বাকিতে খোরাকি ও জ্বালানি নিয়ে, বা আড়ৎদারদের থেকে দাদন নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে যান। মাছ নিয়ে ফিরে এসে সেগুলো পরিশোধ করেন।

কিন্তু আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় অনেক জেলেকে নদীতেই নামছেন না। তাদের অনেককেই নদী পাড়ে ট্রলার মেরামত এবং ছেঁড়া জাল ঠিক করতে দেখা গেছে।

ভোলা সদরের ইলিশা জংশন মাছ ঘাটে গিয়ে কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলে আমান সুতার জাল নিয়ে মেঘনায় একদিন-একরাতে মাছ পেয়েছেন মাত্র পাঁচশ টাকার। কিন্তু এই মাছ শিকার করতে তার খরচ হয়েছে সাড়ে নয় হাজার টাকা।

জেলে সাহাবুদ্দিন পেয়েছেন এক হাজার তিনশ টাকার মাছ। এর বিপরীতে তার খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা।

নিষিদ্ধ হলেও অনেক জেলে কারেন্ট জাল দিয়েও মাছ শিকার করছেন নদীতে। তেমনি এক জেলে নাম না প্রকাশের শর্তে কারেন্ট জাল নিয়ে পেয়েছেন দুই হাজার একশ পঞ্চাশ টাকার মাছ। তবে তার খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকা।

আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় অনেক জেলে নদীতেই নামছেন না। তাদেরকে নদী পাড়ে ট্রলার মেরামত এবং ছেঁড়া জাল ঠিক করতে দেখা গেছে।

আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় অনেক জেলে নদীতেই নামছেন না। তাদেরকে নদী পাড়ে ট্রলার মেরামত এবং ছেঁড়া জাল ঠিক করতে দেখা গেছে।

কারেন্ট জাল ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনিসহ অন্য জেলেরা জানান, এখন কিছু ইলিশ মাছ পাওয়া যায় ভোলা থেকে অনেক দূরে সাগর মোহনার হাতিয়া, সুবর্ণচর এলাকায়। সেখানে যেতে জ্বালানি তেল লাগে অনেক বেশি। নিতে হয় কারেন্ট জাল। কারণ সুতার জালে মাছ তেমন আটকায় না।

নদীতে মাছ না পাওয়ার কথা জানান শিবপুরের ভোলার খাল এলাকার জেলে মোহাম্মদ আবু কাশেমও।

মাছ কমে যাওয়ার বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব বলেন, “সাগর মোহনার পরে ভোলার চরফ্যাশন থেকে উত্তরে অনেক ডুবোচর। তাই সেখানে পানির গভীরতা কম। ইলিশ গভীর পানির মাছ। অনেক সময় ডুবোচরের কারণে সামনে এগোতে চায় না, তাই মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলে ইলিশ কম পাওয়া যায়।

এদিকে সুতার জালে ইলিশ আটকায় না জেলেদের এমন কথার সঙ্গে একমত নন এই মৎস্য কর্মকর্তা।

তিনি বলেন,সুতার জালের চেয়ে অবৈধ কারেন্ট জাল সহজলভ্য এবং দাম কম। জেলেরা তাই কারেন্ট জালের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন।

জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৪০।

মৎস্য আড়তদার আবু তাহের, জামাল কোম্পানি, জামাল ব্যাপারী, দুলাল মহাজন জানান, জেলার কমপক্ষে এক লাখ জেলের কাছে আড়তদারদের ১০ হাজার কোটি টাকা দাদন দেওয়া আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীর পাওনা আছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু নদীতে মাছ না পাওয়ায় এ বিপুল অঙ্কের টাকা আদায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

এদিকে ভোলার বাজারে গ্রেড ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকা করে। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে। আর জাটকা ইলিশের কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মাছ কিনতে আসা কলেজ শিক্ষিকা দিলরুবা জেসমিন বলেন, ইলিশ এখন বিলাসী খাবারে পরিণত হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে বাইরে চলে গেছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *