শিরোনাম

ভরা মৌসুমে মুখ থুবড়ে পড়েছে ইলিশ আহরণ

Views: 51

বরিশাল অফিস :: দেশের রুপালি সম্পদ ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। তবে এমন সময়ে চরম অর্থ সংকটে পড়েছেন উপকূলের ইলিশ ব্যবসায়ীরা। দেশে চলমান পরিস্থিতিতে এক দিনে দুই লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাস্তবে অর্থ সংকটের কারণে একজন ব্যবসায়ীকে দিনে এক লাখ টাকাও দিতে পারছে না ব্যাংক।

ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে তারা ভীষণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। মোকাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা ইলিশের দাম ব্যাংকের হিসাব নম্বরে পরিশোধ করা হয়। তবে তারা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারছেন না। এতে অর্থ সংকটে উপকরণ কিনে ইলিশ আহরণে গভীর সমুদ্রে ট্রলার পাঠাতে পারছেন না মহাজনরা।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য মোকাম বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের (বিএফডিসি) ইলিশ ব্যবসায়ীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বলেছেন, ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সত্য। তারা অর্থ সংকটে পড়ায় অবতরণ কেন্দ্রে রাজস্ব আদায়েও বকেয়া বাড়ছে। দক্ষিণের অন্যান্য মোকামেও ব্যবসায়ীরা একই সংকটে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

পাথরঘাটা সাগর তীরবর্তী হওয়ায় এ মোকাম থেকে সবচেয়ে বেশি ট্রলার সাগরে মাছ আহরণ করতে যায়। ট্রলারগুলো এ মোকামে ফিরেই মাছ বিক্রি করে। অর্থ সংকটে পড়ে সাগরে যেতে না পারা শতাধিক ট্রলার মোকামে বেঁধে রাখতে দেখা গেছে পাথরঘাটায়। জেলে-শ্রমিকরা কাটাচ্ছেন অলস সময়।

তাদেরই একজন জেলে হাবিবুর রহমান দুপুরে জানান, তিন দিন আগে পাথরঘাটার একটি আড়তে ২২ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। ক্রেতারা মহাজনের ব্যাংকের হিসাব নম্বরে টাকা পরিশোধ করেছেন। পুনরায় সাগরে যেতে শুধু খাওয়ার বাজার কেনা বাবদ ৪ লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন। এর সঙ্গে জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। মহাজন টাকা দিতে না পারায় তারাও সাগরে যেতে পারছেন না। হাবিবুর আফসোস করে বলেন, এখন সাগরে প্রচুর ইলিশ। তাঁর মতো অন্য জেলেরাও যেতে না পারায় ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা আহরণ করছেন।

পাথরঘাটা মৎস্য পাইকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন জানান, গত ৫ আগস্ট থেকে এ মোকামে প্রতিদিন অন্তত ৩ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে। পাইকাররা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ট্রাকে মাছ সরবরাহ করেন। ক্রেতারাও হিসাব নম্বরে টাকা পাঠাচ্ছেন।
আব্বাস উদ্দিন বলেন, তাদের হিসাব নম্বরে কোটি কোটি টাকা জমা হচ্ছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী উত্তোলন করতে না পারায় ট্রলার মালিককে টাকা দিতে পারছেন না। একটি ট্রলার সাগরে পাঠাতে অন্তত ৭ লাখ টাকা খরচ করতে হয়।

আড়তদার সগীর হোসেন জানান, গত পাঁচ দিনে পাথরঘাটা বিএফডিসি মোকামে ৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। উপজেলার পাঁচটি ব্যাংকে ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩০০ হিসাব নম্বরের অনুকূলে মাত্র ৩০ লাখ টাকা প্রদান করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। জেলেদের সাংসারিক চাহিদার টাকা দিতেও সুদে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নিতে হচ্ছে।

পাথরঘাটা বিএফডিসির ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ শিকদার জানান, ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় গত ৫ দিনে আড়তদারদের কাছে ২৫ লাখ টাকার রাজস্ব বকেয়া পড়েছে। এ মোকামে আড়তদারদের কাছে মোট ৭০ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে বিএফডিসির। এভাবে বকেয়া বাড়তে থাকলে পরে আদায় দুরূহ হবে।

পাথরঘাটা সোনালী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক সুমন রাহা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী লেনদেন করছেন তারা। একটি হিসাব নম্বরে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে শাখাগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় এ নিয়মও রক্ষা করা যাচ্ছে না। উপজেলার অন্য শাখা ব্যবস্থাপকদের বক্তব্য একই।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান বলেন, মৎস্য ব্যবসায়ীদের সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হবে।

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *