পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের বেহালদশায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কুয়াকাটা ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের। কুয়াকাটা ভ্রমণ এখন অনেকের কাছে আনন্দের চেয়ে ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে বেশি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়কটির বেহাল দশায় এ ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্ট বড় বড় গর্তের এক একটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকছেন কুয়াকাটাগামী পর্যটকরা।
শুক্রবার পাখিমারা বাজার এলাকায় বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা মহাসড়কের গর্তে পড়ে আটকা পড়ে ঢাকাগামী দুটি বাস। এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকসহ ওই এলাকার মানুষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর মৎস্যবন্দর পর্যন্ত সড়কটির সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশে বড় বড় গর্ত হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে গাড়ি। যে কোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, পর্যটনমুখী সড়ক হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের কারণে এবং দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ না হওয়ায় সড়কটিতে অসংখ্য ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়কের অর্ধেকাংশের পিচ, বালু ও খোয়া উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে সড়কটি। সংস্কারে উদ্যোগ না নেওয়ায় ভাঙা সড়ক দিয়েই যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে।
পাখিমারা বাজারের ব্যবসায়ী মো. সোহেল গাজী বলেন, এটা মনে হয় না মহাসড়ক। এটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। ৩-৪ ফুট গর্ত হয়েছে। চলাচলকারী গাড়ি এসব গর্তে পড়লে বড় ধরনের বিপদ ঘটবে।
তার মতে, এটি এখনই সংস্কার না করলে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। প্রভাব পড়বে পর্যটন খাতে।
হানিফ পরিবহনের ড্রাইভার মো. মঞ্জু হাওলাদার বলেন, অনেক ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারি।
আরো পড়ুন : পটুয়াখালীতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ বিয়ার জব্দ, গ্রেপ্তার ৩
কুয়াকাটা থেকে ঢাকাগামী পর্যটক অধরা হাওলাদার জানান, আমরা সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে কুয়াকাটা থেকে রওনা দিই। আমাদের বাসটি পাখিমারা বাজারে বড় গর্তে পড়ে আটকা পড়লে আড়াই ঘণ্টা আমাদেরকে সেখানে বসে থাকতে হয়। পরে ট্রলি গাড়ির সাহায্যে বাসটিকে টেনে উঠানো হয়। এরপর আরও একটি বাস এখানে আটকা পড়তে দেখেছি। দ্রুত এই সড়কের সংস্কার প্রয়োজন বলে জানান তিনি। সড়কের ভোগান্তি দূর করা না হলে অনেকেই কুয়াকাটা বেড়াতে আসবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদের মতে, কুয়াকাটার প্রতি মানুষের অনীহার বড় একটি কারণ হলো সড়কটির চরম দুরবস্থা। সড়কটির কারণে অনেকে কুয়াকাটায় আসতে চায় না। বছরের পর বছর ধরে সড়কটি এভাবে পড়ে আছে। অথচ এর সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। কুয়াকাটার স্বার্থে সড়কটি মেরামত করা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
কুয়াকাটার যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা দূর করা গেলে কুয়াকাটার প্রতি মানুষের আগ্রহ যেমন বাড়বে, তেমনি কুয়াকাটার ব্যবসা-বাণিজ্যও আরও সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯-২০১৪ অর্থ বছরে কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর মৎস্যবন্দরের শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে খুলনার দি রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ২০ কোটি টাকা। কাজটি মানসম্মত না হওয়ায় তখন ঠিকাদারের বিল আটকে দেয় পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এ নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুটি দল সরেজমিন তদন্তও করে। তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকেও কাজের গুণগত মান ভালো হয়নি বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। নিম্নমানের কাজের কারণে তখন সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮ কোটি টাকার বিল আটকে দেয়। তবে এ কাজ বাবদ ১২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দি রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম চূড়ান্ত বিল দাবি করে ২০১৪ সালে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলার কারণে ১১ কিলোমিটার সড়কের ওপর সংস্কার কাজে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। যার ফলে গত দশ বছর ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকে পাখিমারা বাজার থেকে শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত এ অংশের সড়কটি।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ বলেন, ‘কলাপাড়া-কুয়াকাটা সড়কের সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়কটি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় এতদিন এর সংস্কার কাজ করা যায়নি। গত বছরের ২৭ মার্চ উচ্চ আদালত মামলার শুনানি শেষে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় এ সড়কের নির্মাণ বা মেরামতের জন্য আর কোনো বাধা নাই। ইতিমধ্যে সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ১৭ কোটি টাকার প্রাক্কলন তৈরি করে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করছি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী মাসের মধ্যে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিতে পারব। এরপর দ্রুত ওই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে।