মো:আল-আমিন, পটুয়াখালী : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সারা দেশে এক যোগে শুরু হয়েছে আজ রোববার সকাল ৮টায়। কুয়াশামাখা ভোরে ছোট্ট নাতি নিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নের হাতিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে এসেছেন ৮০ ঊর্ধ্ব অরুনা পাল। ভোট দেওয়া শেষে তিনি বলেন, ‘কোনো ভিড় নাই, ভোট দেতে আইছি আর গেছি। ৬০ বছর যাবৎ ভোট দেই কিন্তু এ রকম ভোট আর দেই নাই। ভোটের কোনো আমেজ পাই নাই।’
সকালে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকগুলো কেন্দ্র ঘুরে কোথাও তেমন ভোটারের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। এ ছাড়া জেলার চারটি আসনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে খোঁজ নিয়েও একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।
কুয়াকাটার লতাচাপলি ও হাতিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষের দুটি লাইনের মধ্যে পুরুষের লাইন প্রায় খালি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের উপস্থিতি কিছুটা বাড়ছে। এ সময় ভোট দেতে আসা বেশ কিছু নারী ও পুরুষ ভোটারদের সঙ্গে কথা হয়।
কুয়াকাটার লতাচাপলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসা প্রথম পুরুষ ভোটার কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির আহমেদ ভূঁইয়ার বলেন, ‘সুষ্ঠু সুন্দর ভোট দিছি। তয়, শীতকাল দেইখা এহনো ভোটার আয় নাই, বেলা বাড়লে ভোটার ও বাড়বে।’
হাতিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অনিত্য কুমার হালদার বলেন, ‘শুরুতে ৭-৮ জনের মতো ভোটার ছিল, তবে এখন কিছুটা বাড়তেছে। এখানে ১ ঘণ্টায় ১১৩টি ভোট কাস্ট হয়েছে তবে মোট ভোটার রয়েছে ১৬৩৭ জন। এ ছাড়া একজন প্রার্থীর এজেন্ট নেই।’
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, পটুয়াখালীর ৪টি আসনে ৯টি দল ও স্বতন্ত্রসহ ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলার ৪টি নির্বাচনী আসনে মোট ভোটার ১৪ লাখ ২০ হাজার ৮২৭ ভোট। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার ৯২ ভোট এবং নারী ভোটার ৭ লাখ ৯ হাজার ৭৩৫ জন। এসব ভোটাররা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৫০৬টি ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এদিকে নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে জেলা প্রশাসন নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে প্রতি উপজেলায় দুই প্লাটুন ও জেলা সদরে ছয় প্লাটুনসহ ২২ প্লাটুন সেনাবাহিনী এবং সদর ও গলাচিপায় দুই প্লাটুন করে ও অন্যান্য উপজেলাগুলোতে এক প্লাটুন করে মোট ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিচ্ছিন্ন দীপ রাঙ্গাবালীর তিন ইউনিয়নে তিন প্লাটুন কোস্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করছেন। রাঙ্গাবালী ছাড়া সব উপজেলায় আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি আসনে র্যাবের দুটি করে টিম দায়িত্ব পালন করছেন। চার নির্বাচনী আসনে ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন, ‘নির্বাচন শতভাগ গ্রহণযোগ্য করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করি আজ ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দর একটি নির্বাচন জেলাবাসীকে উপহার দিতে চাই।’