ভোলার সাগর মোহনার দ্বীপ চর ইউনিয়ন চর কুকরি মুকরির মানুষজন দীর্ঘদিন ধরে মৎস্য খাতের সঙ্গে যুক্ত। এখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস হচ্ছে মাছ ধরা। তবে বর্তমানে এই অঞ্চলের জেলেরা কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে আরেকটি লাভজনক পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।
চারপাশে নদী ও সাগর দিয়ে বেষ্টিত চর কুকরি মুকরি এলাকায় বেড়ীবাঁধের এক পাশে বসতি এবং অন্য পাশে শাখা নদী ও সাগর রয়েছে। এখানকার জেলেরা ইলিশ, চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়াকেও এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে চাষ করছেন। গত কয়েক বছরে কাঁকড়া চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, বিশেষ করে বর্ষাকালে কাঁকড়া চাষ ও শিকার বাড়ে।
পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সহায়তা পেলে কাঁকড়া রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। চর কুকরি মুকরির খলিলুর রহমান কয়েক বছর আগে অনাবাদি ১৫ একর জমিতে ঘের তৈরি করে কাঁকড়া চাষ শুরু করেন। তিনি সাগরমোহনার ডুবোচর ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল থেকে কাঁকড়ার বাচ্চা এনে খামারে ছাড়েন এবং খাবার হিসেবে কুচিলা, পচা চিংড়ি, শুটকি ব্যবহার করেন। মাত্র তিন মাসের মধ্যে এই কাঁকড়া আকারে ২শ’ থেকে ৩শ’ গ্রাম ওজনী হয়ে ওঠে। বাজারে সেগুলো ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
এ অঞ্চলের কাঁকড়া চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার হার বেড়েছে। স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে এই পেশায় আগ্রহও বাড়ছে। উপজেলার বঙ্গোপসাগর উপকূলে ঢালচর, চর পাতিলা, মানিকা এবং কুকরি-মুকরীতে নদী ও সামুদ্রিক কাঁকড়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছে হাজারও পরিবার।
এখানে কাঁকড়া শিকার ও চাষের প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে শুকিয়ে যাওয়া খাল, বিল, নদী এবং ম্যানগ্রোভ বাগানে শিকারিদের কাঁকড়া শিকার। কাঁকড়া, বিশ্বের অন্যতম মৎস্যসম্পদ হিসেবে খ্যাত, মূলত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল থেকে আহরিত হয় এবং তা রফতানি হয়ে বিভিন্ন দেশে যায়।
এছাড়া চর কুকরি এলাকার কাঁকড়া চাষী ফিরোজ মেম্বার ২০১৩ সালে এফডিবি সংস্থার সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে পুকুরে কাঁকড়া চাষ শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ভাল লাভ অর্জন করেন। তবে বর্তমানে বাজারের চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে।
এছাড়া চর কচ্ছপিয়া এলাকার কাঁকড়া শিকারি ইসমাইল মিস্ত্রী জানান, তারা পরিবারের চারজন মিলে কাঁকড়া শিকার করেন। তবে বর্তমানে কাঁকড়ার দাম কমে গেছে, ফলে অনেক শিকারি এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
এছাড়া চর কুকরি এলাকার কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, আগে যেখানে প্রতিদিন ৫০টিরও বেশি কাঁকড়ার ঝুড়ি বিদেশে রপ্তানি হতো, এখন সেখানে মাত্র ৫-১০টি ঝুড়ি সপ্তাহে ঢাকা পাঠানো যায়।
এ অঞ্চলের মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, কাঁকড়া চাষ ও শিকার লাভজনক হওয়ায় এখানে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন এনজিও ও মৎস্য অধিদপ্তর কাঁকড়া চাষের প্রতি স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করছে।
মোটকথা, কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে স্থানীয়রা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করছে, এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বড় আয়উৎসবে পরিণত হতে পারে।