বরিশাল অফিস:: ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়া ও ভেলুমিয়া ইউনিয়েনর মধ্যে প্রবাহিত জাঙ্গালিয়া নদীর দৈর্ঘ প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এ নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ দিয়ে দখল করে মাছের ঘের নির্মাণ করেছেন কয়েকজন প্রভাবশালী। কৃষকসহ স্থানীয়দের শঙ্কা, এতে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। শুকনো মৌসুমে নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা যাবে না। আর বৃষ্টি হলেই দেখা দেবে জলাবদ্ধতা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হবে তাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, পশ্চিম চরকালি মৌজার শান্তিরহাট ব্রিজের দক্ষিণ পাশে নৌযান চলালচল ও কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ জাঙ্গালিয়া নদীটি দখলে উৎসবে মেতেছে ভূমিদস্যুরা। খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে নদীর মধ্যেই ঘের নির্মাণকাজ করছে। এ কাজে জড়িত প্রভাবশালী মাকসুদ মাতাব্বর, ইয়াছিন শনি ও ইসমাইল। তারা শনি পাঁচটি ঘের নির্মাণ করেছেন। প্রতিটি ঘেরে ৮ থেকে ১০ একর করে জমি রয়েছে। ব্রিজের উত্তর পাশে হাজি কামাল নামের আরেকজন দুটি ঘের নির্মাণ করেছে। যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কামালের পাশেই গত বছর মো. জাফর নামের অপর এক প্রভাবশালী নদীর মধ্যে ঘের নির্মাণ করে মাছ চাষ করেছেন। গত বছর দুটি ঘের নির্মাণ করা হয়।
প্রকাশ্যে নদী ভরাটের কাজ চললেও দখলমুক্ত করতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে মাটি কেটে ১২ থেকে ১৬ ফুট উঁচু বাঁধ দেওয়ায় নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বাঁধের সঙ্গে পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে ভমিদস্যুরা নিজেদের জমি হিসেবে দখল করে নিচ্ছে। এতে ধানসহ চাষাবাদ হুমকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করছেন রফিজুল ইসলাম, মো. হোসেন, আবদুল হকসহ অনেকে। তাদের অভিযোগ, নদী দখল করা বা নদীর পড়ে এমন ঘের নির্মাণ সম্পূর্ণ বেআইনি। এভাবে নদীতে বাঁধ দেওয়ায় নাব্য সংকট দেখা দেবে। যার প্রভাব পড়বে প্রকৃতি ও কৃষিতে।
এ বিষয়ে মাকসুদ মাতব্বর জানান, সেকমা ও বাঘমারা মৌজায় নদীর পাড়ে তিনি চারটি ঘের নির্মাণ করছেন। বন্দোবস্ত নেওয়া জমির মালিকদের কাছ থেকে তিনি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে এসব জমি ইজারা নিয়ে মাছের খামার করছেন। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। আরেক দখলদার ইয়াছিন শনি জানান, ভাই ইসমাইলসহ তারা নদীর পাড়ের ৯৫ শতাংশ জমি কিনেছেন। আর ৫৫ শতাংশ জমি লগ্নি নিয়ে মাছের ঘের করছেন। তবে নদী দখলের বিষয়টি তারা এড়িয়ে যান। তিনি কেনা জমির দলিল দেখাতে পারেননি।
প্রকৃতি ও কৃষি রক্ষায় নদী দখলমুক্ত রাখার ওপর গুরুত্ব অপরিসীম জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, নদী-খাল হচ্ছে এলাকার প্রাণ। এ পানির কারণে প্রকৃতি ও কৃষি রক্ষা পায়। নদী দখল করলে কৃষি ও নাব্য সংকট দেখা দেবে, যা ওই এলাকার জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলী সুজা বলেন, নদী দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সত্যতা পেলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নদীর জায়গা কোনো অবস্থাতেই বন্দোবস্তযোগ্য নয়। ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড হওয়ারও সুযোগ নেই বলে জানান এ কর্মকর্তা।