ভোলা জেলার কৃষকদের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সব শঙ্কা কাটিয়ে এবছর আমন ধানের ফলন অত্যন্ত ভালো হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও অতিজোয়ারের কারণে শুরুর দিকে যে সমস্যাগুলি তৈরি হয়েছিল, তা কাটিয়ে কৃষকরা নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে এবং অতিরিক্ত লাভের আশা নিয়ে ধান কেটে মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। রোগ-বালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণও ছিল কম, যার কারণে এবারের আমন ফসলের ফলন বিশেষত প্রশংসনীয় হয়েছে।
এবছর আমন ধানের ফলন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। অনেক কৃষক তাদের খরচ মেটাতে সক্ষম হবেন এবং পূর্বের ঋণ পরিশোধও করতে পারবেন। ফলন ভালো হওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে এবং বিশাল মাঠজুড়ে সোনালি ধানের দোল খাওয়া দৃশ্যটি প্রমাণ করছে কৃষকদের আনন্দ।
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা মিলে ৭ উপজেলায় প্রায় ৪ লাখ ২৮ হাজার কৃষক রয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ ২৫ হাজার কৃষক আমন আবাদ করেছেন। চলতি বছর, জেলার ৭ উপজেলায় আমন ধানের জন্য মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৬ হেক্টর জমি।
সরেজমিনে ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের আমন ধান চাষ করেছেন, যেমন ব্রি-৫২, বিআর-২২, বিআর-২৩, স্বর্ণা, বিনা-১৭, ২০, ব্রি-৬৬, ৭০, ৭৮, ১০৩ ইত্যাদি। ধানের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ফলনও ভালো হওয়ায় কৃষকরা আশান্বিত। অনেকেই ইতোমধ্যে তাদের জমির পাকা ধান কেটে নিয়েছেন, আর বাকিরা ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক মোজাম্মেল মাঝি জানান, তিনি ১৩ গন্ডা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে এবং তিনি আশা করছেন লাভবান হবেন। চরসামাইয়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহিম মিয়া ৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন এবং ইতোমধ্যে ১ হেক্টরের ধান ১২ মন পেয়েছেন, যা তিনি ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
এদিকে, ইলিশা ইউনিয়নের কৃষক মো. মাইনউদ্দিন জানান, তার জমিতে প্রথমে অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ধানের চারা পচে গিয়েছিল। পরে তিনি আবার ধান রোপণ করেন এবং আশা করছেন ন্যূনতম ২৭ হাজার টাকার ধান পাবেন।
দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের কৃষক মো. মোসলেহউদ্দিন বলেন, তিনি সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আমন ধান আবাদ করেছিলেন। যদিও জোয়ার ও বৃষ্টির কারণে আমনের চারা পচে গিয়েছিল, তবে তিনি আবারও ধান লাগিয়েছেন এবং আশা করছেন লাভ হবে।
ধানের ব্যাপারী মো. মিজান জানান, তিনি সরাসরি কৃষকদের জমি থেকে ১ হাজার ৭০ থেকে ১,১০০ টাকা মণে আমন ধান কিনছেন এবং পরে আড়তদারের কাছে ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে বিক্রি করছেন।
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কৃষিবিদ এ এফ এম শাহাবুদ্দিন বাসস’কে জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টি ও অতিজোয়ারের কারণে কিছু চারা পচে যাওয়ায় কৃষকরা অতিরিক্ত চারা সংগ্রহ ও কূশী ভেঙে পুনরায় রোপণ করেছেন, যার ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হওয়ায় প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৪ দশমিক ৯ টন।
মো: তুহিন হোসেন,
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম