শিরোনাম

মঠবাড়িয়া সরকারি খালে অবৈধ বাঁধ দেয়ায় হাজার হাজার একর ফসলী জমি বিরান : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষিত

Views: 281

সরকারি একাধিক খালে অবৈধ বাঁধ দেয়ায় হাজার হাজার একর ফসলী জমি বিরান : পানি প্রবাহ হ্রাসসহ নৌ-যোগাযোগ বন্ধ : ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপেও জট খুলছেনা। প্রধানমন্ত্রীর নিদর্শেনা উপেক্ষিত।

এস এম পারভেজ (পিরোজপুর): পিরোজপুরের দক্ষিনের বলেশ্বর নদীবেষ্টীত বৃহৎ উপজেলা মঠবাড়িয়া। জমি আর জেলে নিয়ে এ উপজেলার সাধারন মানুষের জীবন-জীবিকা। এখানে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ভূমি দস্যু জেলা পরিষদের আওতাধীন সরকারি খালে অবৈধ বাধঁ, অদৃশ্য শক্তি আর পেশী শক্তি প্রয়োগ করে খালগুলোকে গলা টিপে হত্যা করছে বছরের পর বছর। স্থানীয়রা অসহায় ও নির্বাক হয়ে পেশী শক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছেন। তীব্র প্রতিবাদ, মানববন্ধন আর গনমাধ্যম কর্মীদের লেখনীতেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। উপর মহলের নজরে বিষয়গুলো নেয়া হলেও সেখানে মিলছেনা কোন প্রতিকার। প্রধানমন্ত্রীর শ্লোগান “এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবেনা” আর সেখানে বছরের পর বছর হাজার হাজার ফসলী জমিগুলো পতিত থাকছে।

সরেজমিনে উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নের বাদূরা গ্রামে গিয়ে চোখে পড়ে এই তান্ডবলীলা। স্থানীয়রা জানান, ২৫১ দাগ নম্বরের ১ দশমিক ২২ (খাল) এবং ৩৯৫ দাগ নম্বরের ১ দশমিক ৪৮ (খাল) দুটি দোগোনা ও ভূতার খাল নামে পরিচিত। ওই দুটি খালে অন্তত ৫-৭টি অবৈধ বাঁধ তৈরী করে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ এবং বালু ভরাট করে নিজেদের দখলে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দখলী এসব খাল জেলা পরিষদের রেকর্ডীয় সম্পত্তির খাল উল্লেখ করে পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা খান জেলার মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, সরেজমিনে বা্ধঁ এলাকা পরিদর্শন করে তিনি এর সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন এবং খাল উদ্ধারের বিষয় জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছেন।

জানাযায়, বিশখালী ও বলেশ্বর নদীর সংযোগ খাল হিসেবে পরিচিত ভূতার খাল ও দোগোনা খালসহ অন্যান্য শাখা খালের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৫-৭টি বাঁধ এবং ছোট কালভার্টগুলোকে ভেঙ্গে পাকা সড়ক তৈরী করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এর ফলে ধানিসাফা, মিরুখালী ও দাউদখালি ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট উত্তর ও দক্ষিন মিরুখালী, বাদূরা, ছোট হাড়জি, নাগ্রাভাঙ্গা, ছোট ও বড় শৌলা, ভগিরথপুর, তেতুলবাড়িয়া, বাঁশবুনিয়া, দেবীপুর, পাতাকাটা, ফুলঝুড়ি ও ওয়াহেদাবাদসহ আরও প্রায় ২৫টি গ্রামে পানি প্রবাহ না থাকায় পানিয় জলের সংকটে অনাবাদি থাকছে হাজার হাজার একর জমি।
অপরদিকে, কোন স্লুইস গেট না থাকায় বর্ষাকাল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অন্তত ৪ থেকে ৫ হাজার একর জমি প্রতিবছর অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। যাতে একসময় আমন ও আউশ ধান চাষাবাদ করা হতো।

সরেজমিনে গেলে ওই এলাকার সাধারন জনগন ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বাঁধের পক্ষের প্রভাবশালীদের মামলা-হামলা ও হুমকী-ধামকীর ভয়ে মুখ খুলে প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারছেনা। তবে, এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদ কর্মী অবৈধ বাঁধ অপসারনের দাবীতে সোচ্চার রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ধানসিাফা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি মোসলেম মোল্লা খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। এ প্রসঙ্গে মোসলেম মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, খালে বাঁধ পূর্বেই দেয়া ছিল, আমরা একটি সমিতির মাধ্যমে বাঁধের মধ্যে মাছ চাষ করছি। এদিকে স্থানীয় একটি কামিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা বর্তমানে কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সম্প্রতি তার মাদ্রাসায় যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি আয়রন ব্রীজ থাকা সত্বেও তিনি খালে আরও একটি মাটির বাঁধ তৈরী করে নিজের দখলে রেখেছেন। ৩নং মিরুখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সোবাহান শরীফ “চন্দ্রদীপ নিউজ”কে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ওই সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জেলা পরিষদের খাল ভরাট করে মার্কেট তৈরী করে প্লট দেয়ার নাম করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিচ্ছেন বলেও দাবী করেন তিনি। বাদূরা গ্রামের শিক্ষক ও বা্ধঁ অপসারন আন্দোলনের নেতা রোকনুজ্জামান শরীফ বলেন, অভিশপ্ত বাঁধ অপসারনের দাবীতে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দেয়া হলেও রহশ্যজনক কারনে গলারকাটা বাঁধ এখনও অপসারিত হয়নি।
অন্যদিকে, পিরোজপুর ০৩ আসনের (মঠবাড়িয়া) সংসদ সদস্য ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে ভূক্তভোগীদেরকে অবৈধ এ বাঁধ কাটার বিষয় আশ্বস্থ করলেও এখনও বাঁধ অপসারন করা হয়নি।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, খালের সবগুলো বাঁধ অপসারনে আন্ত:বিভাগীয় সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *