শিরোনাম

মন ভোলাচ্ছে সেলিমের গুড়ের জিলাপি

Views: 20

চন্দ্রদ্বীপ নিউজ :: নেই কোনো সাইন বোর্ড। নেই সাজ-সরঞ্জামও। চারদিকে টিন আর কাঠ দিয়ে তৈরি দোকান। নামবিহীন এই হোটেলে তৈরি হচ্ছে গুড়ের জিলাপি। কড়াই থেকে জিলাপি তোলার ফুরসত পান না কারিগর। আর এই জিলাপি কিনতে রীতিমতো লাইনে দাঁড়ায় লোকজন।

এমন এক দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের সড়ক বাজারের মায়াবী সিনেমা হল (আদর আলী কমপ্লেক্স) সামনের মোড়ে একটি হোটেলে। রাস্তার পাশে গড়ে উঠা মো. সেলিম মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে জিলাপি তৈরি করে বিক্রি করছেন।

তার হাতের জিলাপি সুস্বাদু হওয়ায় এলাকায় বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। এই জিলাপির অন্য রকম স্বাদ থাকায় বছরজুড়ে এর চাহিদা রয়েছে বেশ। সরেজমিন হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই কারিগররা গরম তেলের কড়াইয়ে ভাঁজছেন জিলাপি। এরপর ভাজা জিলাপি সিরায় দিয়ে তুলছেন বিক্রির জন্য। এখানে জিলাপি তৈরিতে কোনো ধরনের কেমিকেল মেশানো হয় না এতে। এই হোটেলে সব সময় থাকে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে এখানে ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু মূলত জিলাপি হওয়ায় এমন ভিড় প্রতিদিনের ঘটনা। হোটেল মালিক মো. সেলিম মিয়া বলেন, সড়ক বাজার এলাকায় প্রায় ২৫ বছর ধরে এ ব্যবসা করছি। জিলাপি তেল, ময়দা, গুড় দিয়ে তৈরি করা হয়।

এই হোটেলে মূলত দুই ধরনের জিলাপি তৈরি করা হয়। একটি গুড় দিয়ে অন্যটি চিনি দিয়ে। তবে গুড়ের জিলাপির সব চাইতে বেশি চাহিদা রয়েছে। সকাল ১০ টার পর থেকে জিলাপি বানানো শুরু করি রাত ৮ টা পর্যন্ত চলে বিক্রি। প্রতিকেজি শাহী জিলাপি ২০০, চিনি গুড় ১৬০ টাকায় বিক্রি করছি। দৈনিক গড়ে ২ মণ জিলাপি বিক্রি হয়। শুক্রবার হলে বিক্রি বেড়ে যায়। তাছাড়া ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অনেকে আগ থেকেই চাহিদানুযায়ী অর্ডার করে যায়। জিলাপি বিক্রিতে ভালো টাকা আয় হওয়ায় আমি খুশি। পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার ক্রেতা মুর্শেদ মিয়া বলেন, ঘরের সবার কাছে গুড়ের জিলাপি খুব প্রিয়।

সবখানে ভালো জিলাপি পাওয়া যায় না। সড়ক বাজার এলাকায় সেলিম মিয়ার হোটেলের গুড়ের জিলাপির অনেক সুনাম আছে। যখনই জিলাপি খেতে ইচ্ছে হয় তখন এখান থেকে কেনা হয়। কলেজ পাড়া এলাকার মো: বাছির মিয়া বলেন, আমার কাছে গুড়ের জিলাপি খুবই পছন্দ। সময় সুযোগ হলে এখানে এসে জিলাপি খেয়ে যায়। ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে তার দোকান গুড়ের জিলাপি খেতে যেতাম। ঘরের লোকজন জিলাপি খেতে চেয়েছে তাই ১ কেজি কেনা হয়েছে। ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়া বলেন, এই হোটেলে জিলাপি ছাড়া ও পুরি, সিঙ্গারা, পরটাসহ নানা প্রকারের খাবার তৈরি হয়। কিন্তু চিনি আর গুড়ের তৈরি জিলাপির বেশ সুনাম রয়েছে। এখানকার জিলাপি সুস্বাদু, খেতেও বেশ মজা। প্রায় সময় হোটেলে বসে আমরা জিলাপি খাই এবং বাড়িতে নিয়ে যায়।

তাছাড়া মিলাদ মাহফিলসহ নানা অনুষ্ঠানে এখান থেকে জিলাপি কেনা হয়ে থাকে। শিক্ষক লিয়াকত হোসেন বলেন, জিলাপি আমার ছোট বেলা থেকেই পছন্দ। গুড়ের জিলাপি এখন অনেক দোকানে তৈরি করা হলেও এখানের জিলাপির কোন তুলনা হয় না। বাড়িতে একটি মিলাদের আয়োজন থাকায় ১০ কেজি শাহী জিলাপি কেনা হয়েছে। কারিগর হরিপদ ঘোষ বলেন, তিন দশকের বেশি সময় ধরে এখানে জিলাপি তৈরির কাজ করছি। এ জিলাপির মান ভালো হওয়ায় দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এর মান ধরে রাখার আমরা চেষ্টা করছি।

প্রতিবার জিলাপি ভাজতে নতুন তেল ব্যবহার করা হয়। একবার ব্যবহার করা তেল দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয় না। এ কারণে জিলাপি খেয়ে সবাই প্রশংসা করেন। হোটেল মালিক সেলিম মিয়া বলেন, বর্তমানে জিলাপি তৈরির সব উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তবুও আমরা সবসময় গুণগত মান ভালো রাখার চেষ্টা করছি। এ প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই।

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *