পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় অন্তত ২৫ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত রোববার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গতকাল সোমবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের ভিকাখালী, মধ্য আন্দুয়া ও আন্দুয়া আবাসন; মাধবখালী ইউনিয়নের সন্তোষপুর; মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের সুলতানাবাদ, দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের সুবিদখালী এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রাকিব ফরাজী, সেলিম সিকদার, রাব্বি ও শাকিল গাজী নামের চারজনকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফিরোজ হাওলাদার (৫৫), রিয়াজ খলীফা (৩৩), মিরাজ খলীফা (২৮), ইলিয়াস খলীফা (৪০) বিপ্লব গাজী (৩৫), ইলিয়াস হোসেন (২৬), শামিম খান (৩৫), মনির হাওলাদার (৩০), মাসুম মিয়া (৪৮), বাসুদেব (৫৫), নাসির হাওলাদার (৪৭), আইয়ুব আলী মৃধা (৫২), রাতুল মৃধা (৩২) সাইফুল আলম (২৮) নিজাম সিকদার (২৬) ও মো. সুজন সিকদারকে (৩৫) মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তাঁরা উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী, মধ্য আন্দুয়া, আন্দুয়া, ভিকাখালী, উত্তর আমড়াগাছিয়া, সুলতানাবাদ ও সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে গত ২৯ মে মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে নির্বাচন স্থগিত করে ৯ জুন ভোট গ্রহণ করা হয়। এরপর গত দুই দিনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষে জড়ান। আজ ভিকাখালী বাজারে ভাইস চেয়ারম্যান পদের জয়ী প্রার্থী ওমর ফারুক (শাওন) ও পরাজিত প্রার্থী দুলাল ফকিরের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়ান। একই দিনে পাশের আন্দুয়া গ্রামে চেয়ারম্যান পদের জয়ী প্রার্থী খান মো. আবু বকর সিদ্দিকী ও পরাজিত প্রার্থী জহিরুল ইমলামের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া সন্তোষপুর, সুলতানাবাদ, দেউলী সুবিদখালী ও আমড়াগাছিয়া গ্রামে সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে।
জয়ী ভাইস চেয়ারম্যান ওমর ফারুক অভিযোগ করে বলেন, আজ সকাল ১০টার দিকে ভিকাখালী বাজারে দুলাল ফকিরের সমর্থকেরা তাঁর বেশ কয়েকজন সমর্থককে পিটিয়ে আহত করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে দুলাল ফকিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে চেয়ারম্যান পদের পরাজিত প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ী কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী খান মো. আবু বকরের লোকজন বিভিন্ন এলাকায় আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গত দুই দিনে আমার অন্তত ২৫-৩০ জন নেতা-কর্মী হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’
আরো পড়ুন : বরিশালের ৯ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন যারা
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী খান মো. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য পরাজিত প্রার্থীর লোকজন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। নির্বাচনের দুই দিন আগে কলাগাছিয়া গ্রামের আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করে ঘোড়া প্রতীকের (জহিরুল) লোকজন। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর সুযোগ পেলেই আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করছে। আমার কর্মী-সমর্থকেরা যাতে সংঘর্ষে না জড়ায়, সে ব্যাপারে তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে।’
মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, দু-একটি স্থানে নির্বাচন-পরবর্তী সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। তবে সব ঘটনাই নির্বাচনী সহিংসতা নয়। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কিছু ঘটনা ঘটছে। সুবিধা নিতে নির্বাচনী সহিংসতা বলে প্রচার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। গতকাল রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।