পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় লোহালিয়া নদীর শাখা একসময়ের খরস্রোতা মুরাদিয়া নদী এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। জলবায়ু পরিবর্তন, পলি জমা এবং দীর্ঘদিনের অবহেলার ফলে নদীটি তার প্রাকৃতিক প্রবাহ হারিয়েছে, যা একসময় স্থানীয়দের জন্য জীবিকার প্রধান উৎস ছিল।
প্রবাহহীন নদীর করুণ চিত্র
একসময় এই নদীতে পাল তোলা নৌকা, বড় স্টিমার ও লঞ্চের সরব চলাচল ছিল। কিন্তু বর্তমানে নদীতে পানির অভাবে নৌকাও চলাচল করতে পারছে না। ভাটার সময় নদীর পানি এতটাই কমে যায় যে নৌযান চলাচল একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে।
মুরাদিয়া নদী প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা দুমকি উপজেলার আংগারিয়া ও মুরাদিয়া ইউনিয়নকে আলাদা করেছে। বর্ষাকালে একসময় এই নদী মৎস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল, কিন্তু এখন পলি জমে সরু খালে রূপান্তরিত হয়েছে।
কৃষিতে বিপর্যয়ের শঙ্কা
দক্ষিণ মুরাদিয়া গ্রামের কৃষক মো. হানিফ নেঘাবান বলেন, “বর্ষার সময় চরের পানি জমে আমন চাষ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, খরায় পানি না থাকায় ইরি ধান চাষ করা যাচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “নদীটি পুনঃখনন করলে বর্ষায় আমন ও শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে।”
নৌপথের ঐতিহ্য হারানোর আশঙ্কা
মুরাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সিকদার জানান, “মুরাদিয়া নদীটি ছিল পণ্য পরিবহনের অন্যতম পথ। কিন্তু বর্তমানে নদীটি সরু খালে পরিণত হওয়ায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ। ফলে সড়কপথে ঘুরে যাতায়াতে খরচ বেড়ে গেছে। কৃষিপণ্য পরিবহনেও অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে।”
খননকাজের দাবিতে এলাকাবাসী
দক্ষিণ শ্রীরামপুরের বাসিন্দা মাস্টার জাহিদুল ইসলাম জানান, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, “প্রভাবশালীরা খাস জমি দখল করে নিচ্ছে, এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি আমরা।”
এলাকাবাসী দাবি করছেন, নদী পুনঃখনন ও পুনরুজ্জীবন করা হলে কৃষি, মৎস্য এবং নৌপথে সুবিধা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। নদী খননের পাশাপাশি দুই তীরে ভেরি বাঁধ নির্মাণ করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন স্থানীয়রা।
—