মূল্যস্ফীতি কমাতে বাজারে পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। তারা উল্লেখ করেছেন, আমদানি ও উৎপাদনে সমান গুরুত্ব আরোপ করার পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কেনার ব্যবস্থা করতে হবে। এর মাধ্যমে বড় আমদানিকারকদের আমদানি প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে।
অর্থনীতি বিশ্লেষক ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধুমাত্র সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশে মূল্যস্ফীতি কমানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ইতোমধ্যেই নতুন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এবং আশা করা হচ্ছে রোজার সময় এর সুফল পাওয়া যাবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “গত ১৫ বছরের ভুল নীতির কারণে বাজারে পণ্যসংকট সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব এখনো চলছে।” তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণের পর কিছু ব্যাংক আমদানিকারকদের এলসি খোলার সুযোগ দিতে পারছে না, ফলে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না।” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “আমদানি না হলে বাজারে পণ্য সরবরাহ কিভাবে বাড়বে?”
প্রবীণ এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, “বাজারে তিনভাবে পণ্য সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব। এক. শিল্পকারখানায় উৎপাদন বাড়ানো, দুই. আমদানি করা, তিন. চাষ করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা।” তিনি বলেন, “শিল্পকারখানায় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে হবে, যা এলসি খুলতে না পারলে সম্ভব হবে না।” তিনি বলেন, জমির পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব নয়, তাই ফসল উৎপাদন বাড়াতে উন্নত বীজ ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষাবাদ করতে হবে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, “খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্য আমদানিতে বড় কিছু প্রতিষ্ঠান জড়িত। অনেক প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় বাজারে পণ্যসংকট সৃষ্টি হয়েছে। রোজায় এই সংকট আরও বাড়তে পারে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, “পণ্য সরবরাহ বাড়াতে এনবিআর বিভিন্ন শুল্ক কমিয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে তা প্রত্যাহার করেছে। যদিও এতে রাজস্ব আদায় কমলেও জনগণের স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “আমাদের দেশে বড় ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠান অধিকাংশ পণ্য আমদানি করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ হওয়ায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেমন টিসিবি, এসব বড় প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য সরবরাহ গ্রহণ করে থাকে, তাই পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, সরকারি উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত আমদানি-রফতানি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি খাদ্য পণ্য সংগ্রহের বিষয়েও সরকার কাজ করছে। বিভিন্ন বৈঠকে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আলোচনা করা হচ্ছে।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম