শিরোনাম

রাঙ্গাবালীতে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল, অতিষ্ঠ গ্রাহকরা

Views: 48

 

মো:আল-আমিন, পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরাঞ্চলে অনিয়ম, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার আর ভুতুড়ে বিল প্রদানে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকরা। বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এজিএমের বিরুদ্ধে। টাকা না দিলে মিলে না বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে বিদ্যু’ ভোগান্তি ও কর্মচারী কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারে ফুঁসে উঠছে চরাঞ্চলের দরিদ্র সাধারণ মানুষ।

চার দিকে সাগর ও নদীবেষ্টিত দ্বীপ রাঙ্গাবালী। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে দেশের সর্বদক্ষিণের দ্বীপ এই রাঙ্গাবালী উপজেলায়। রাঙ্গাবালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘ দিন ধরেই। ভৌতিক বিল, বিদ্যুৎ সংযোগের নামে অর্থ আদায়, নতুন মিটারের আবেদনের টাকা নিয়ে একের পর এক তারিখ পরিবর্তন ও হয়রানি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ইত্যাদি নানা অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।
উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের গ্রাহকদের সামান্য বকেয়া বিলের জন্য বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা, নতুন মিটারের আবেদন করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ দিয়ে মিটার পেতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্পকে পুঁজি করে একটি দালালচক্র বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণে আগ্রহীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রের সাথে পল্লী বিদ্যুতের এজিএমএর যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ দিকে প্রতি মাসে বিলের কাগজ না দিয়ে তিন-চার মাস পর একটি কাগজ পাঠিয়ে দিয়ে লাইন কেটে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এরপর চলে দেন-দরবার। টাকা না দিলে লাইন কেটে দিয়ে নানা কৌশলে অর্থ আদায় করা হয়। ফলে চরাঞ্চলের হাজার হাজার গ্রাহক নানা ভাবে পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবহারে হয়রানির শিকার হচ্ছে।

কুলসুম নামে বাহেরচরের এক ভুক্তভোগী বলেন, বিদুৎ বিলের কাগজ না এনে তারা আমার কাছে টাকা চায়। আমি টাকা দিইনি। তিন মাসে পর হঠাৎ একদিন এসে ৯০০ টাকা বিল চায়। আমি বলি, বিকেলে গিয়ে অফিসে টাকা জমা দিয়ে আসব। আমার কথা না শুনে তারা সাথে সাথে লাইন কেটে দেয়। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। এত টাকা এক সাথে পাবো কোথায়?

বিদ্যুতের লোকেরা এসে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতে হাতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সে টাকা অফিসে জমা না দিয়ে আবার কয়েক মাস পরে নতুন করে বিল ধরিয়ে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন এনি নামে আরেক গ্রাহক।
তিনি বলেন, মিটারের কাগজ দেয়নি তারা কয়েক মাস ধরে। হঠাৎ এক দিন এসে টাকা চায়। তাকে টাকা দিয়ে দিয়ের কয়েক দিন পর আরেক জন এসে লাইন কাটার হুমকি দেয়। বলে যায় অফিসে গিয়ে দেখা করতে। আমি অফিসে গিয়ে দেখি ইতঃপূর্বে হাতে হাতে দেয়া টাকা অফিসে জমা পড়েনি। এভাবে অযথাই আমাদের হয়রানি করছে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকেরা।

আরেক গ্রাহক কল্পনা বিবি বলেন, তিন মাসের মিটার বিলের কাগজ দেয়নি আমাকে। আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি আমার লাইন কাটা। সেই লাইন আবার লাগাতে আমার ৭০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ দিতে হয়।
কল্পনা আরো বলেন, আমি এজিএম স্যারের কাছে যাই। তিনি আমার অভিযোগ না শুনেই বলে দেন, সব দোষ নাকি আপনাদের। লাইন কাটার সময় আমি ছিলাম না কেন, এটাই নাকি আমার অপরাধ।
কল্পনা বলেন, মাসে মাসে তারা অন্যায় করবে, আর আমরা তার মাশুল দেবো। বিদ্যুৎ তো নয়, এটা তাদের টাকা নেয়ার ফাঁদ।

এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের এজিএম তৌফিক ওমরের সাথে কথা হলে তিনি সরাসরি টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। ভৌতিক বিল, মিটারের লাইন কেটে দেয়া এবং মিটার সংযোগে গড়িমসি করার বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে কারা টাকা নিচ্ছে, তিনি সে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *