বরিশাল অফিস:: আব্দুল মালেক। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী তার বয়স ৫৫ বছর। তবে মালেকের দাবি তার বয়স অন্তত ৬৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ আব্দুল মালেক। শরীরে হার্নিয়া বাসা বেঁধেছে। এর যন্ত্রণায় কাবু তিনি। তবুও জীবিকার তাগিদা রোজ বের হন পুরনো রিকশা নিয়ে। ওই রিকশার প্যাডেল চেপেই জীবিকা জোগান বৃদ্ধ আব্দুল মালেক।
তিনি ভোলার লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বালুরচর এলাকার গহরআলী মাতাব্বর বাড়ির বাসিন্দা।
বৃদ্ধ আব্দুল মালেক বলেন, গত ২৫ বছর ধরে এই রিকশা চালাচ্ছি। ২০ বছর ধরে শরীরে হার্নিয়া বাসা বেঁধেছে। এই রিকশা চালিয়ে তেমন কোনো আয় নেই। আবার পায়ে প্যাডেল চেপে এই রিকশা চালানো অনেক কষ্টেরও। তার উপরে আবার হার্নিয়ার যন্ত্রণা। তবুও জীবিকার তাগিদে রোজ রিকশা নিয়ে বের হই। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে তিনশ টাকার মতো উপার্জন করতে পারি। এ দিয়ে নিজে চলি। আর মাঝে মধ্যে রিকশা মেরামত করি।
তিনি বলেন, প্রথম বিয়ে করার কয়েক মাসের মাথায় আমাকে ফেলে স্ত্রী চলে যান। এরপর মোট চারটি বিয়ে করেছি। কোনো স্ত্রীই বেশি দিন আমার সংসার করেননি। যার জন্য আমার কোনো সন্তান নেই। এ কারণে ছোট ভাইয়ের ঘরে থাকি। তারাই আমার খেদমত করেন। মাঝে মধ্যে নিজের আয় থেকে তাদের জন্য বাজার-সদাই করি। এখন অনেক বয়স হয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরেও বাড়ছে রোগ। এরমধ্যে হার্নিয়ার সমস্যাটাই সবচেয়ে বেশি। এর জন্য চলাফেরা ও উঠতে-বসতে অনেক কষ্ট হয়।
বৃদ্ধ আব্দুল মালেক আরো বলেন, টাকার অভাবে এর অপারেশনও করাতে পারছি না। রিকশাটিতেও নানা সমস্যা। তাই সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি একটি নতুন রিকশা পেতে অনুরোধ করছি। হার্নিয়ার অপারেশন করাতে পারলে আর নতুন রিকশা পেলে বাকি জীবন মোটামুটি একটু ভালোভাবে কাটাতে পারবো।
ওই বৃদ্ধ রিকশা চালকের ছোট ভাই মো. বাদশা মিয়া জানান, আমি নিজেও বোরাক চালাই। বোরাক চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাই। বড় ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তান কেউ নেই। তার অনেক বয়সও হয়েছে। শরীরিকভাবেও তিনি অসুস্থ। যার জন্য বড় ভাইকে আমাদের সঙ্গেই রাখি। সরকারি কিছু সহযোগিতা পেলে বড় ভাইয়ের জন্য অনেক ভালো হতো।
কালমা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আল-আমিন ইমন বলেন, আমার জানামতে তিনি স্থায়ীভাবে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তবে ব্যক্তিগতভাবে তাকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করি। ওই বৃদ্ধের হার্নিয়া অপারেশনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা যায় কিনা দেখবো।
লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ওই বৃদ্ধ ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এছাড়া তাকে সরকারি অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা যায় কিনা দেখবো।