পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: আদালতের রায় উপেক্ষা করে প্রতিপক্ষরা রেকর্ডিয় জমি দখল করায় পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের মাটিভাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র বৃদ্ধা ও তার পঙ্গু স্বামী সংবাদ সন্মেলন করেছে।
৩রা সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) বিকেলে পটুয়াখালী অনলাইন প্রেসক্লাব এর অস্থায়ী কার্যালয় পটুয়াখালী পৌর নিউ মার্কেটের ২য় তলায় উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগী মোসাঃ নুরজাহান বেগম এর পক্ষে তার ছেলের স্ত্রী সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
মোসাঃ নুরজাহান বেগম স্বাক্ষরীত লিখিত বক্তব্যে বলেন, মাটিভাঙ্গা মৌজার বিএস-৬৭২ নং খতিয়ানে পটুয়াখালী জেলা জজের রায় (১১৯/২০০১) অনুযায়ী আমি ২ একর ১০ শতাংশ জমি দখলে বুঝিয়া নেই। এরপর এই খতিয়ান থেকে ১৯৮৭ সালে ৬ শতাংশ এবং ২০১২ সালে ৩১ শতাংশ মোট ৩৭ শতাংশ জমি বিক্রয় করি। যেখানে ১ একর ৭৩ শতাংশ জমি অবশিষ্ট থাকে। ভূমি অফিসের রেকর্ড জরিপের পর ১ একর ৬২ শতাংশ জমি বুঝিয়া পাই। যাহা মাটিভাঙ্গা মৌজার বিএস-৬৭২ নং খতিয়ানের ৫২৩৪, ৫২৩৮, ৫২৮৭, ৫৯০৪, ৫৯০৫, ৫৯১১, ৫৯১২, ৫৯১৪ দাগ সমূহ। আদালতের রায়ের পর থেকে বিবাদীদের বিভিন্ন প্রতিরোধ ও হুমকি ধামকীর পরও এই জমি আমার দখলে ছিল এবং বাঙলা ১৪৩০/ইং ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিয়মিত চাষাবাদ করি। কিন্তু বিবাদীরা এরপর থেকেই আক্রামনাত্মক হয়ে বিভিন্ন সময়ে আমাকে এবং আমার স্বামীকে হুমকি ধামকি দেয়। এতে ২৪/০৩/২০২৪ ইং তারিখ আমার স্বামী সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার আশায় বিবাদীগন বেল্লাল বয়াতী, দুলাল বয়াতী, জালাল বয়াতী, সর্ব পিং-সৃত, হাচন উদ্দিন বয়াতী, ইব্রাহিম খান, আইয়ুব খান, পিতা: মৃত, সুলতান খান, সর্ব সাং-মাটিভাঙ্গা জোর পূর্বক আমার জমিতে চাষাবাদ করায় পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর তাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। (স্মারক নং-১৯৬)। এরপর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসার মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত প্রতিবেদন শেষে গত ২৯/০৮/২০২৪ ইং তারিখ শুনানীর তারিখ ধার্য্য করেছিল। ঐ দিন উভয় পক্ষ উপজেলা ভূমি অফিসে উপস্থিত হয়ে শুনানীতে অংশগ্রহন করি। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বিবাদীদের জমি ছাড়িয়া দিতে মৌখিকভাবে নিদের্শ দেন। তবে ০১/০৯/২০২৪ ইং তারিখ চলতি মৌসুমে আমার জমিতে ধান রোপন করতে গেলে পূর্বের বিবাদীসহ তার দোসররা লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার লোকদের তাড়িয়ে দেয় এবং জোর পূর্বক আমার জমিতে চাষাবাদ শুরু করে।
এই জমি নিয়ে ইতিপূর্বে ২০১২ সালে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদেরকে পিটিয়ে আহত করে এতে আমার পা ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এতে আমাদের হাসপাতালে অনেক দিন চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এরপর এ বিষয় নিয়ে তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রে কোর্টে আমার স্বামী মো: সোবাহান হাওলাদার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিল। তবে তার অসুস্থ্যতা জনিত কারণে মামলা না চালাতে পারায় সেটি খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু বিবাদীরা এরপর থেকে বহুবার হামলা করার চেষ্টা করে। তবে সৌভাগ্যক্রমে প্রতিবার তাদের আক্রমন থেকে রক্ষা পাই।
আমি আর্থিকভাবে গরিব ও অস্বচ্ছল, আমার স্বামী একজন পঙ্গু। আমার ছেলে সন্তানরাও রোজগারের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম থাকে। আমি আমার পঙ্গু স্বামী নিয়ে একাকি দুর্বিসহ জীবন যাপন করিতেছি। বিবাদীরা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নির্দেশ অমান্য করিয়া বর্তমানে আমার জমিতে জোর পূর্বক ধানের বীজ বপন করিতেছে এবং আমার পরিবারের লোকদের বেপরোয়াভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে যে আমরা যেন জমির ধারে কাছেও না যাই। যদি জমির ভিতরে আমরা প্রবেশ করি তবে আমাদের প্রানে মেরে ফেলবে। বর্তমানে আমরা অত্যান্ত ভীত ও শংকিত হয়ে জান মালের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন, বর্তমান সরকার ও গনমাধ্যম কর্মীদের শরানাপন্ন হয়েছি। আমি তাদের এরুপ অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, ভূমি দখল, হুমকি ধামকি থেকে আমার পঙ্গু স্বামী ও পরিবার নিয়ে নিরাপদে ডাল ভাত খেয়ে যেন বাঁচতে পারি এবং আমার রেকর্ডীয় সম্পত্তি ফিরে পেতে পারি সেই আশা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী মোসাঃ নুরজাহান বেগমের সঙ্গে তার পঙ্গু স্বামী মোঃ সোবাহান হাওলাদার, এক ছেলের স্ত্রী, মেঝ মেয়ে ও ছোট মেয়ে উপস্থিত ছিল।