বরিশাল অফিস :: লঞ্চে ঘুরতে গিয়ে নিজেই একটি রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বরিশালের স্কুলছাত্র মো. হাসান (১৫)। ৫ ফুট দৈর্ঘ্যের লঞ্চটি এরইমধ্যে পানিতেও ভাসিয়েছে সে। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী প্রিন্স আওলাদ-১০ এর আদলে লঞ্চটি তৈরি করেছে হাসান।
হাসান বরিশাল নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোডের দক্ষিণ আলেকান্দা কাজিপাড়ার এলাকার চা বিক্রেতা সিদ্দিকের ছেলে। সে বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র।
হাসান জানায়, ককশিট, প্লাস্টিকের পাইপ, কাগজ, মোটর, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক তার, রিমোট কন্ট্রোলার ও পাখা দিয়ে লঞ্চটি তৈরি করতে তার সময় লেগেছে প্রায় দুই মাস। খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার বেশি। লঞ্চটি তৈরি করে এরইমধ্যে পুকুরের পানিতেও ভাসিয়েছে সে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রিন্স আওলাদ-১০ এর আদলে হাসানের বানানো লঞ্চটি রিমোট কন্ট্রোলড। লঞ্চে লাগানো হয়েছে একটি মোটর। মোটর দুটি চালু রাখতে পাওয়ার হিসেবে ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। মোটরটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে দুটি পাখা, যা ঘুরিয়ে সামনে-পেছনে নিয়ে যায় লঞ্চটি।
তিনতলায় মাস্টার ব্রিজ থাকা এ লঞ্চটির বিভিন্ন তলায় বাহারি রঙের আলোকবাতি লাগানো হয়েছে। নিচতলায় ডেক ও সামনে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি, দোতলা-তিনতলায় কেবিন এবং তিনতলার ওপরে পেছনের অংশে সাইলেন্সারের ধোঁয়া বের হওয়ার জায়গা। সামনে হেড লাইট রয়েছে, যা দেখতে হুবহু প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের মতো।
কথা হয় লঞ্চ বানানো স্কুলছাত্র হাসানের সঙ্গে। সে বলে, ‘আমি সবসময় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। সেজন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাতে সময় পেলে কিছু বানানোর চেষ্টা করি। ছোটবেলা থেকেই কোনো কিছু দেখলেই সেটা বানানোর চেষ্টা করতাম। সম্প্রতি পরিবারের সহযোগিতা ও বড় ভাইয়ের আর্থিক সহায়তায় ২০ হাজার টাকারও বেশি খরচ করে লঞ্চটি তৈরি করেছি।’
লঞ্চটি দেখতে হুবহু প্রিন্স আওলাদ-১০ এর মতো। এর কারণ প্রসঙ্গে হাসান বলে, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চে ঢাকা যাই। পরে বাড়ি ফিরে লঞ্চটি বানানো শুরু করি। প্রায় দুই মাসের চেষ্টায় সফল হয়েছি।’
লঞ্চটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পানিতে চলতে পারে বলেও জানায় স্কুলছাত্র হাসান।
হাসানের স্কুলশিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘ও ছোট থেকেই মেধাবী। তার এ কর্মকাণ্ডে আমরা শিক্ষক হিসেবে গর্বিত। তার মেধার যদি মূল্যায়ন করা হয় এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়, তাহলে সে নতুন নতুন আবিষ্কার দেখাতে পারবে।’
বাবা সিদ্দিক বলেন, ‘আমার ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই এসব কাজ করে যাচ্ছে। এসব কাজের জন্য তাকে পরিবার থেকে সবসময় আর্থিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দেওয়া হয়। তার স্বপ্ন পড়াশোনা করে সে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমি সবধরনের চেষ্টা করে যাবো। আমার বিশ্বাস সে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হবে।