চন্দ্রদীপ নিউজ: ঢাকা নদী বন্দরের (সদরঘাট) টার্মিনাল। ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ২৫টি পন্টুন পাশাপাশি এক সারিতে সাজানো। এসব পন্টুনে কমবেশি একশ লঞ্চ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বেশিরভাগ লঞ্চই অলস বসে আছে। হাতেগোনা কয়েকটি লঞ্চে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এসব লঞ্চের সামনে কর্মচারীদের হাঁকডাক। যাত্রী ডেকে ডেকে তুলছেন লঞ্চে। মঙ্গলবার বিকালের দৃশ্য এটি। এদিন সকালে ছিল আরও করুণ দৃশ্য। শুধু চাঁদপুর ঘাটে কিছু সংখ্যক যাত্রী দেখা যায়। লঞ্চের মালিক-শ্রমিক জানান, ঈদের মাত্র অল্প কয়েকদিন বাকি থাকলেও নৌপথে যাত্রী চাপ নেই বললেই চলে। যাত্রী সংকট থাকায় লঞ্চ শ্রমিকেরা ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছেন। তবে তাদের আশা, ঈদের আগের কয়েকদিন যাত্রী চাপ বাড়বে। যাত্রী চাপ অনুযায়ী বাড়তি লঞ্চও চালাবেন মালিকরা। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্র্যন্ত যানজট কমিয়ে আনার দাবি মালিক সমিতির। মঙ্গলবার সরেজমিন সদরঘাটে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একাধিক কর্মকর্তা জানান, সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর ৪১টি রুটে লঞ্চ চলাচল করত। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে লঞ্চের যাত্রী অনেক কমে গেছে। যাত্রী না থাকায় ৭-৮টি রুটে কোনো লঞ্চ চলাচল করে না। বাকি রুটগুলো সচল থাকলেও সীমিত আকারে লঞ্চ চলাচল করছে। তারা আরও জানান, পদ্মা সেতু চালুর আগে সাধারণ সময়ে প্রতিদিন সদরঘাট থেকে ৬৫-৭৫টি লঞ্চ ছেড়ে যেত। সেখানে রোববার ও সোমবার (২৪ ও ২৫ মার্চ) ৪৭টি করে লঞ্চ ছেড়ে গেছে। তার আগে শনিবার ৪৫টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এসব লঞ্চে গড়ে ৫০০ জন যাত্রী ঢাকা ছেড়েছেন বলে ওই কর্মকর্তাদের ধারণা। এই অবস্থায় মালিকদের খরচ পোষাতে লঞ্চে যাত্রীর পাশাপাশি মোটরসাইকেল বহনের অনুমতি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। আকারভেদে বড় লঞ্চগুলোতে সর্বোচ্চ ছয়টি মোটরসাইকেল বহন করা যাবে।
লঞ্চে যাত্রী কমে যাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম গণমাধ্যমকে বলেন, আগের মতো যাত্রী সংকট চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর যাত্রী কিছুটা বাড়লেও তা উল্লেখ করার মতো না। বেশিরভাগ লঞ্চ কেবিন ফাঁকা রেখে চলাচল করছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে দীর্ঘদিন থেকে নৌপথে যাত্রী সংকট থাকায় মালিকরা লঞ্চ চালিয়ে পোষাতে পারছেন না। লোকসানের মুখে ২০০টির বেশি লঞ্চ স্ক্র্যাপ (ভেঙে বিক্রি করা হয়েছে) হয়ে গেছে। মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম আরও বলেন, মালিকদের পক্ষ থেকে আমরা ১৮ দফা দাবি জানিয়ে আসছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-সদরঘাট পর্র্যন্ত যাতায়াতের পথ নির্বিঘ্ন এবং যানজটমুক্ত রাখা। নদী বন্দরে কুলি-হয়রানি, হকার, ক্যানভাসার, ছিনতাইকারীমুক্ত রাখা। তাহলে যাত্রীরা নৌপথে যেতে আগ্রহী হবেন।