শিরোনাম

লেবাননে সরকারের পরিবর্তন চান নেতানিয়াহু

Views: 34

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: ইসরায়েলের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে লেবাননের সরকার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠকের সময় এই দাবি জানিয়েছেন তিনি।

গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের প্রধান নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার হওয়ার পর গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুটি ফের আলোচনায় আসে। গাজায় শিগগির যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় ইসরায়েলকে রাজি করানোর জন্য মঙ্গলবার জেরুজালেমে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ওই দিনই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

বৈঠকে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর হামলার কারণে গত কয়েক দশকে উত্তর ইসরায়েলের অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তারা নিজ দেশ ইসরায়েলে ফিরতে চান; কিন্তু ইসরায়েলে ফেরার পর যেন ফের তাদের এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে না হয়, সেজন্যই লেবাননের সরকার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে ব্লিনকেনকে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং হামাস নেতা সিনওয়ারের নিহত হওয়ার ঘটনা সেই প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তাই এখন যদি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষনা করা হয়, সেটি জিম্মিদের উদ্ধারের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

নেতানিয়াহুর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ব্যাপ্তিকাল ছিল প্রায় দুই ঘণ্টা। বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠকটি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, ইসরায়েল এবং লেবানন প্রতিবেশী দেশ। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অপর পাশেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। হিজবুল্লাহর প্রধান ঘাঁটি এবং সামরিক স্থাপনাগুলোর অবস্থানও ইসরায়েলের সীমান্তঘেঁষা দক্ষিন লেবাননের গ্রামগুলোতে।

উল্লেখ্য, ইরানের প্রত্যক্ষ মদত ও সমর্থনপুষ্ট হিজবুল্লাহ সামরিক স্থাপনা, যোদ্ধার সংখ্যা এবং মজুতকৃত অস্ত্রের পরিমাণের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ গোষ্ঠীটি শুরু থেকেই ইসরায়েলকে ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

লেবাননের সরকার কিংবা সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে হিজবুল্লাহর সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, তবে আড়ালে থেকে দেশটির ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে গোষ্ঠীটি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে উত্তর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ, তবে সেই হামলার মাত্রা ব্যাপকভাবে গোষ্ঠীটি বাড়িয়েছে ২০২৩ সালে গাজায় হামাস এবং ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ বাঁধার পর থেকে।

হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ, পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে ইসরায়েলও। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে গত এক বছরে নিহত হয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে সামরিক, বেসামরিক উভয়ই আছেন। সংঘাতের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে সে সময় উত্তর ইসরায়েলের অনেক বাসিন্দা নিজেদের বাসভবন ও পরিচিত এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন।

গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। প্রায় ১০ দিনের সেই অভিযানে নিহত হন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা ও সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েক জন শীর্ষ কমান্ডার। এতে গোষ্ঠীটির চেইন অব কমান্ডের সর্বোচ্চ স্তর কার্যত ভেঙে পড়ে।

বিমান অভিযান পর্বের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ লেবাননে অভিযান শুরু করে আইডিএফের স্থল বাহিনী। এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইডিএফ বলেছিল, ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে সীমিত ও স্থানীয় পর্যায়ে অভিযান চালানো হবে। তবে কতদিন এ অভিযান চলবে, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা ইঙ্গিত এখনও দেয়নি আইডিএফ।

ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ইতোমধ্যে লেবাননে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

সূত্র : রয়টার্স

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *