চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক :: ১ম নবী হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সব নবীই ছিলেন আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত ও মানব সমাজের জন্য ইলমে ওহীর শিক্ষক ও বাহক।
আল্লাহ তাআলা যত নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন তারা সবাই ছিলেন শিক্ষক। নতুন নতুন জ্ঞানের ধারাও চালু করেছেন তারা। তারা সরাসরি জনগণকে শিক্ষা দিতেন। গণমানুষ ছিল তাদের শিক্ষার্থী।
নবী ও রসুলদের সবশেষ শিক্ষাগুরু ছিলেন সবশেষ নবী ও রসুল হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।’ (হিদায়াতুর রুয়াত ২৪৮)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হে মানুষেরা, আমি তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রসুল পাঠিয়েছি। যে তোমাদের কাছে আমার আয়াত (কোরআন) পাঠ করে শোনায়, তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে, তোমাদের কিতাব ও হিকমত (কোরআন ও বিজ্ঞান) শিক্ষা দেয় এবং তোমরা যে বিষয়ে কিছুই জানতে না, সেটা শিক্ষা দেয়।’ (সুরা বাকারা ১৫১)
এই আয়াতে বলা হয়েছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে ঐশি শিক্ষা পূর্ণতা লাভ করে। তিনি তার কার্যকর ও বাস্তবমুখী শিক্ষানীতি ও পদ্ধতির মাধ্যমে আরবের মূর্খ ও বর্বর একটি জাতিকে পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করেন এবং ইসলামের মহান বার্তা ছড়িয়ে দেন পৃথিবীর আনাচে-কানাচে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের আগে আরব সমাজে সীমাহীন মূর্খতা বিরাজমান ছিল, সম্ভ্রান্ত পরিবারে লেখাপড়া দোষ হিসাবে বিবেচিত হতো। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমনের পর আরবের প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আরবের প্রত্যেক গোত্রের একটি দল মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যেত এবং তার কাছে ধর্মীয় বিষয়াদি জিজ্ঞেস করে ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করত।’
নবীজির শিক্ষা ও উপদেশ দানের বিভিন্ন নিয়ম পদ্ধতি ছিল। প্রথমত, ১০-২০ দিন কিংবা এক মাস দুই মাস অবস্থান করে আকায়েদ বা মৌলিক বিশ্বাস ও অন্যান্য জরুরি মাসয়ালা শিখে নিত। এরপর আপন গোত্রে ফিরে গিয়ে তাদের তা শিক্ষা দিত।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মালেক ইবনে হুয়াইরেস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রতিনিধি দল নিয়ে এসে ২০ দিন অবস্থান করলেন এবং জরুরি মাসয়ালা শিখে নিলেন।
দ্বিতীয় পদ্ধতি ছিল খুব স্থায়ী। অর্থাৎ মুসলমানগণ স্থায়ীভাবে মদিনায় বাস করতেন এবং চরিত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতেন। তাদের জন্য ‘সুফ্ফা’ নামের বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। এতে বেশির ভাগ ওইসব মুসলমান অবস্থান করতেন, যারা যাবতীয় পার্থিব ক্রিয়া-কর্ম থেকে মুক্ত হয়ে দিন-রাত ইবাদত ও জ্ঞানার্জনে মগ্ন থাকতেন।
মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষক ও শিক্ষার প্রতি যে অনুরাগী ছিলেন এবং শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতেন এর প্রমাণ নিম্নে বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা তার শিক্ষা পাচ্ছি।
নবীজি (স.) একদিন মসজিদে গেলেন। মসজিদে তখন দুটি মজলিস চলছিল: একটি হচ্ছে জিকিরের মজলিস, অন্যটি পাঠদানের। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠদান তথা জ্ঞানচর্চার মজলিসটিতে বসলেন এবং মন্তব্য করলেন যে আমাকে শিক্ষকরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। (মিশকাত, কিতাবুল ইলম পর্ব)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো, তিনি ছাত্রদের সামনে বিনয়ী হতেন। তাদের প্রতি স্নেহশীল থাকতেন। তা বুঝানোর জন্যই রসুল (স.) বলেন, আমি হচ্ছি তোমাদের সামনে পুত্রের জন্য পিতার ন্যায়। তাই আমি তোমাদের শেখাবো। (সুনানে তিরমিজি) এখানে পিতার সঙ্গে শিক্ষকের তুলনা সম্মানের দিক থেকে তিনি করেননি। বরং করেছেন দয়া ও স্নেহের দিক থেকে।