শিরোনাম

শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে পটুয়াখালীতে অভিভাবকের দীর্ঘশ্বাস

Views: 41

মো: আল-আমিন (পটুয়াখালী): পটুয়াখালী পৌর শহরে একতা সড়ক এলাকায় বসবাস বিলাস দাস ও সম্পা রানী দাস দম্পতির। তাদের দুই ছেলে-মেয়েই পড়ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বছর শেষে বেসরকারি চাকরিজীবী বিলাসের রোজগার বাড়েনি। তবে বেড়েছে পরিবারের বিভিন্ন চাহিদা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাগজ, কলম, খাতা, পেন্সিলসহ সব শিক্ষা উপকরণের দাম। রোজগারের স্বল্প টাকায় খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

গৃহিণী সম্পা রানী দাস বলেন, আমার স্বামী আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার একার রোজগারে সংসার চালানোর পর বাচ্চাদের লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়াটা এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয়। এর মধ্যে কাগজ, কলম, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে আমরা ভবিষ্যতে কী করব তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি। এখন সংসারের খুটিনাটি খরচ কাঁটছাঁট করে বাচ্চাদের লেখাপড়া সামনের দিকে চালিয়ে নিতে হবে।

বিলাস দাস বলেন, বাচ্চাদের পড়াশোনা তো চালাতেই হবে। এ ক্ষেত্রে নিজেদের শখ আহ্লাদ বাদ দিতে হবে। সরকার যদি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয় তবে ভবিষ্যতে বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হবে। আর সরকার যে উপবৃত্তি দেয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতেই নাজেহাল সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা উপকরণের দামবৃদ্ধি যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। তাই সন্তানদের পড়াশোনা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা অভিভাবকদের জন্য অনেকটাই কষ্টসাধ্য। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজের দাগ ফেলেছেন মধ্যবিত্তরা।

অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান ও ঈশিতা জানান, কিছু দিন আগেও যে কাগজের রিম ছিল ৩৫০ টাকা ছিল সেটার দাম বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা। প্রতিটি শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে। এতে আমাদের অভিভাবকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। তাদের কাছে বাড়তি টাকা চাইতে লজ্জা লাগে, কিন্তু আমাদের কী করার আছে, সরকারের উচিত এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া।

অভিভাবক তানভীর হাসান জানান, সরকার মাধ্যমিক পর্যন্ত শিশুদের বই বিনামূল্যে দিচ্ছে, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিচ্ছে, কিন্তু অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে বছরে কয়েক দফা শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা পড়েছি বিপাকে। ১২০ পৃষ্ঠার ৩৫ টাকার খাতা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায় এবং বাচ্চাদের হাতের লেখার ২০ টাকার খাতা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। শুধু কাগজ আর খাতাই নয়, দাম বেড়েছে প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা উপকরণের।

শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে শিক্ষকদেরও। তারা আশঙ্কা করছেন, এভাবে লাগামহীন দাম বৃদ্ধি শিশুর ঝরে পড়ার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, শিক্ষা উপকরণের দাম দিন দিন দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত অভিভাবকদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির চাপে অভিভাবকরা যদি তাদের শিশুদের স্কুলে না পাঠায় তবে আমাদের করার কিছুই থাকবে না।

শহরের ঐতিহ্যবাহী স্টেশনারি দোকানের স্বত্বাধিকারী মো. খসরু জানান, পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকায় খুচরা পর্যায়েও দাম বেড়েছে আর এ জন্য তারা ক্রেতাদের তোপের মুখে পড়ছেন। বাজারে চাহিদা থাকায় তারা পুঁজি খাটিয়ে জিনিসপত্র কিনে আনছেন। তবে কেনাবেচা কমেছে বলে জানান তারা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাবেই এ সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। শিক্ষার খরচ সংকুলানের জন্য শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বৃদ্ধির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *