হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন। বরিশালসহ বিভাগের ছয় জেলার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অস্বস্তিকর শীতের কবলে পড়েছে। গত দুদিনে সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। ঘন কুয়াশার সাথে শীতল হাওয়া সবকিছু ঢেকে রেখে, বিশেষত ভোর ও রাতের দিকে মহানগরীসহ পুরো অঞ্চল কুয়াশার চাদরে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে।
শীতের প্রকোপের পাশাপাশি, বিশেষ করে বয়স্ক এবং শিশুরা শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড় বাড়ছে, যা থেকে বোঝা যায় যে শীতকালীন রোগের প্রকোপ বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ শীতজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মাজহারুল ইসলাম জানান, গত দুদিন ধরে বরিশালে সূর্যের দেখা মেলেনি। বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ রয়েছে, যার কারণে আকাশ মেঘলা এবং কুয়াশা বেশি। তিনি আরও জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বরিশালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে, চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং আগামী তিনদিনে শীতের প্রকোপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
দুদিন ধরে সূর্যের আলো না মেলায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ শীতের তীব্রতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষত শ্রমজীবী মানুষের জন্য এই শীতকাল অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠেছে। জীবিকার তাগিদে অনেকেই শীতের মধ্যেও কাজ করতে বেরিয়েছেন, তবে শীতের কারণে তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। সড়ক ও নৌপথে ঘন কুয়াশার কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, যার ফলে যাত্রীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষত শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, শীতকালীন সময়ে সাধারণত হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ে। তিনি বলেন, ‘‘শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্করা, যারা নিউমোনিয়া, অ্যাজমা এবং ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া, শিশুদেরও এই সময় তীব্র সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’’
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওবায়দুল ইসলাম জানান, শীতজনিত রোগে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। তিনি বলেন, ‘‘এখন শিশুরা অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া ও ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের সময় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।’’ তিনি শিশুদের পরামর্শ দেন, ‘‘শীতকালে তাদের ভালোভাবে গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে এবং ভেজা স্থানে রাখা যাবে না। পাশাপাশি, এ সময় শিশুদের জন্য ভাইরাল ফিভার বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসের উপসর্গ বেড়ে যেতে পারে।’’
বয়স্কদের জন্যও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘‘বয়স্কদের জন্য নিউমোনিয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, তাই তাদের যথাসম্ভব শীত থেকে দূরে রাখা উচিত এবং গরম কাপড় পরানো উচিত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রচুর পানি এবং শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।’’
এদিকে, শীতজনিত রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে হাসপাতালে, তবে চিকিৎসকরা মনে করছেন যে সতর্কতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, এই শীতকাল আরও অনেক মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মো: তুহিন হোসেন,
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম