বরিশাল অফিস :: বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও, হাসপাতালের মূল ভবনসহ পাঁচতলা প্রশাসনিক ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডে ন্যূনতম অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। এমনকি ভবন নির্মাণের নকশাতেও কোনো অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
গত রোববার সকালে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার স্টোররুমে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। দাহ্য পদার্থের ধোঁয়ায় পুরো ভবনটি আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেও, আগুন নিচতলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। অব্যবস্থাপনার শিকার মেডিসিন ওয়ার্ডটি যেখানে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে প্রায় ৩শ রোগী মেঝেতে চিকিৎসাধীন থাকেন। অগ্নিকাণ্ডের সময়ও কয়েকশ রোগী পাঁচতলা ভবনে ভর্তি ছিলেন, যা রোগীদের নিরাপদে সরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তোলে।
হাসপাতালের আইসিইউতে প্রায় ৫০ জন রোগী ছিল, যাদের সরিয়ে আনতে দমকল কর্মী, পুলিশ এবং হাসপাতালের কর্মীরা একত্রে কাজ করেন। তবে রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়ে গেছে।
অতীতে এমন কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে শর্টসার্কিট থেকে করোনা ওয়ার্ডে আগুন লাগে। এরপর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে হৃদরোগ বিভাগের আইসিসিইউতে শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যা এক রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।
রোববারের অগ্নিকাণ্ডের পর আবারও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে, তবে এখনো অগ্নিকাণ্ডের উৎস চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। যদিও প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটকে ঘটনার কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে।
হাসপাতালে পরিচালক পদে দীর্ঘদিন ধরে কোনো স্থায়ী নিয়োগ না থাকায় সমস্যাটি আরও জটিল হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের মুখে পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম পদত্যাগ করেন এবং তাকে ওএসডি করা হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন মহল থেকে সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোর থেকে নতুন পরিচালক নিয়োগের দাবি উঠেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি, ফলে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই হাসপাতালটি চলছে অপ্রতুল ব্যবস্থাপনায়।
দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম এই হাসপাতালটিতে রোগীদের চিকিৎসা সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি জরুরি অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।