শিরোনাম

শেয়ারবাজারে বড় দরপতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারী

Views: 32

চন্দ্রদ্বীপ নিউজ :: দেশের শেয়ারবাজারে চরম আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই কমছে সূচক ও শেয়ারের দাম; নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফলে দিন দিন বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের আয় কমে যাওয়ায় তারাও বিপাকে; কোনো কোনো হাউস কর্মচারীদের বেতন দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক হাউসই ব্যয় সংকোচনে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ একেবারেই কমে গেছে।

এদিকে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত নিম্নমানের কোম্পানির সংখ্যা আরও বেড়েছে। একসঙ্গে ২৮ কোম্পানিকে নতুন করে জেড শ্রেণিভুক্ত করেছে ডিএসই। এর ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এখন ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত। এটি বাজারের জন্য খুবই ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গত ১৫ বছরে একের পর এক মানহীন কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়াতেই এমন হয়েছে। বিএসইসির আগের দুই কমিশন এমন অনেক কোম্পানিকে বাজারে এনেছে, যেগুলো কোনোভাবেই উপযুক্ত ছিল না।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, বাজারে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট রয়েছে। এ ছাড়া বাজারে বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। যেসব কোম্পানি রয়েছে, সেগুলোতে বিনিয়োগের পর দিনই দাম কমে যাচ্ছে। বিনিয়োগের মতো ভালো কোম্পানির অভাব রয়েছে। এ জন্য নতুন কোম্পানি আনার বিকল্প নেই। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে কার্যকর সংস্কার করতে হবে। তা হলেই কেবল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার হবে।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের শেয়ারবাজারে মন্দাভাব চলছে। চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিলÑ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে শেয়ারবাজার আলোর মুখ দেখবে। স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে। সেখানে কোনো ক্ষতিকর হস্তক্ষেপ থাকবে না।

শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুনর্গঠিত বিএসইসি শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে পারছে না। বিনিয়োগকারীসহ শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ৯৭ পয়েন্ট কমেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এদিন বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকা। আর আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে ২৬৬ কোটি টাকা। ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার চারগুণেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ঢালাও দরপতন হয়েছে। বাজারটিতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে তার প্রায় ছয়গুণ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে এ বাজারটিতেও কমেছে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯৯ প্রতিষ্ঠানের। আর ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে ২৭ ব্যাংকের শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ৬টির শেয়ার দাম কমেছে। ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৯৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন কমেছে ২৬৬ কোটি ৮ লাখ টাকা।

অন্যদিকে সিএসইতে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২০৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৮টির এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *