শিরোনাম

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ৬৫ ভাগ শিক্ষকের পদ শূন্য

Views: 64

বরিশাল অফিস :;: দেশের অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বরিশালের শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজটিতে শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক অচলাবস্থার সম্মুখিন। ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৩১ শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫১ জন। ১৮০টি পদে কোন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা নেই। অনুমোদিত পদের প্রায় ৬৫ ভাগেরও বেশী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ছে। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬০ বছর পরেও ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, কিউরেটর, প্রভাষক, প্যাথলজিষ্ট, মেডিকেল অফিসার ও বায়োকেমিষ্ট এর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর অর্ধেকেও পদায়ন নিশ্চিত হয়নি। বছর দুয়েক আগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের কিছু নতুন পদ সৃষ্টি করা হলেও সে আলোকে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে শূন্য পদের সংখ্যাটা বেড়ে সংকট আরো তীব্রতর হয়েছে।

কলেজটির শিক্ষক সংকটের কারণে হাসপাতালটিতেও চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভয়াবহ সংকট চলছে। পুরো হাসপাতালটিতে নানা অব্যবস্থা-অনিয়ম আর চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা সংকটের মধ্যে অতি সম্প্রতি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বদল হয়েছে। নতুন সভাপতি বরিশাল সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম গত শুক্রবার রাতে বরিশালে সর্বস্তরের জনগণ সহ হাসপাতাল ও কলেজ প্রশাসন নিয়ে এক বৈঠকে আগামী ৩ মাসে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা উন্নত করা সহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। কিন্তু এখানে মেডিকেল কলেজ ব্যবস্থাপনায় কোন বেসরকারী কমিটি নেই। তবে সদর আসনের এমপি এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে কলেজের শিক্ষক সংকট সহ শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে তার নৈতিক দায় আছে বলেও মনে করছেন সাধারন মানুষ থেকে সচেতন মহল।

১৯৬৪ সালের ৬ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর আবদুল মোনয়েম খান বরিশাল মেডিকেল কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পরে ১৯৬৮ সালের ২০ নভেম্বর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার একমাত্র মেডিকেল কলেজটির উদ্বোধন করা হয়। ১৯৭৮ সালে মেডিকেল কলেজটি সংযুক্ত হাসপাতালটির নিজস্ব ভবন উদ্বোধন করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অবিভক্ত বাংলার গভর্ণর ও বরিশালের কৃতি সন্তান শের ই বাংলার নামে এ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালটির নামকরন করেন।

কিন্তু শিক্ষক সংকটে ঐতিহ্যবাহী এ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ব্যবস্থা এখন চরম বিপর্যয়ের কবলে। বছরের পর বছর ধরে শিক্ষক সংকটের মধ্যেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে মঞ্জুরিকৃত পদের ৮০ ভাগ শিক্ষকও নিয়োগ না দেয়ায় সংকট ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ফয়জুল বাশার। তারমতে, শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টি আমরা নিয়মিত অবহিত করছি। শিক্ষক সংকটে এখানে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ ক্রমে হাস পাচ্ছে। এমনকি চিকিৎসা শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৬৫ ভাগ শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এখানের লেখাপড়ার মান নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজে নতুন ১০টি সহ ৫০ জন অধ্যাপকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। নতুন ২৪ জন সহ ৫০ জন সহযোগী অধ্যাপকের স্থলে আছেন ৪২ জন। আর ৪৩টি নতুন পদ সহ ১২৩ সহকারী অধ্যাপকের স্থলে আছেন মাত্র ৫৭ জন।

এছাড়াও চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৮২ জন প্রভাষক, মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজিষ্ট,বায়োকেমেষ্ট্রি ও ফার্মাসিষ্ট পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪৫ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের ২০৫ জন কর্মচারীর মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৯২ জন।

ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ১২৩ সহকারী অধ্যাপক পদের ৬৬টি পদই শূণ্য পড়ে আছে। ফলে অনেক বিভাগে কোন শিক্ষকই নেই। প্রভাষক বা মেডিকেল অফিসার দিয়েও পুরো বিভাগের শিক্ষাক্রম চলছে বেশ কয়েকটি বিভাগে। কিন্তু প্রভাষক, মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজি, বায়োকেমেষ্ট্রি ও ফার্মাসিষ্ট-এর ৮২টি পদেরও ৩৭টি শূন্য পড়ে আছে।

এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডেন্টাল বিভাগে প্রতিবছর প্রায় অর্ধশত ছাত্রÑছাত্রী ভর্তি করা হলেও সেখানে শিক্ষা দেয়ার মত তেমন কোন শিক্ষকই নেই। ফলে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগ থেকে যারা পাস করে বের হচ্ছে তাদের বিষয়েও নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। এমনকি এ বিভাগের ক্লিনিক্যাল শিক্ষার জন্য সংলগ্ন হাসপাতালটির ইনডোরের অবস্থাও নাজুক।

দেশের ঐতিহ্যবাহী ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকের শূন্যপদ নিয়ে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ফয়জুল বাশার জানান, করোনাকালে ১৯ মাস ক্লাস বন্ধ ছিল। এসময়ে অনেক শিক্ষক অবসরে গেছেন। ফলে ঐসব শূন্যপদে জনবল নিয়োগে যে বিলম্ব ঘটে, তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগছে। সমস্যায় থাকলেও কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম নির্বিঘœ রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *