শিরোনাম

সন্ত্রাসী পথে ববি’র অর্ধশত শিক্ষার্থী, আতঙ্কে নিরীহ শিক্ষার্থীরা

Views: 108

বরিশাল অফিস :: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাসে দিনে দিনে ভয়ংকর হয়ে শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্কিত হয়ে উঠছে রিদম ও আরাফাত নামের দুইটি গ্রুপ। তাদের বিরুদ্ধে চুরি, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নির্যাতন ও মাদক সেবনসহ ক্যাম্পাস ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে শিক্ষকদের কক্ষে তালা দেয়া, সড়ক অবরোধ ও প্রশাসনকে বাঁধা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে নানা তথ্য।

গ্রুপ দু’টির প্রধান নেতা হিসেবে চিহ্নিত হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আবুল খায়ের আরাফাত ওরফে মদারু জুয়েল এবং গণিত বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মোবাশ্বের রিদম ওরফে প্যাদা তানভিন৷ তাদের ছত্রছায়ায় ববি’র অনেক শিক্ষার্থী মিলে করছে নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম। দু’গ্রুপের অধিকাংশ সমর্থকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দেবার ঘটনায় কারাভোগও করেছেন আরাফাত। কারাভোগ করার পর জামিনে বেড়িয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে আরাফাত।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ববিতে ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর অন্য পক্ষের হামলার পর ক্যাম্পাসে শক্ত অবস্থান করে মোবাশ্বের রিদম ও তার সহযোগিরা। সেই ঘটনায় মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আয়াত উল্লাহ নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দেয়। ববি’র প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আহত শিক্ষার্থী অনশন করেছে। অনশনরত আহত আয়াত উল্লাহ মার্কেটিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র। এ ঘটনার মামলায় রিদমসহ তার সহযোগিদের আসামী করা হয়। এরপর থেকেই দল বেঁধে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় একের পর এক অপরাধ করে দিনে দিনে ভয়ংকর রুপে ফুটতে উঠতে শুরু করেছে রিদম ও আরাফাতের সাঙ্গপাঙ্গরা।

গত অক্টোবরে ববি’র বঙ্গবন্ধু হলের একটি রুমে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদ কে আটকে রেখে রাতভর বেদম নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে পরে সে। এ ঘটনায়ও রিদম ও আরাফাত গ্রুপের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে ববি’র প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেন নির্যাতিত শিক্ষার্থীর বাবা। মুকুলকে নির্যাতনের রাতে বঙ্গবন্ধু হলে মদের বোতল হাতে মোবাশ্বের রিদমের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বরে বন্দর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন মোসা: ডলি বেগম নামের এক নারী। এ মামলার আসামী হলেন ববি’র ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন। অভিযুক্তরা নগদ অর্থসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।

২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ববি’র সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪- ১৫ সেশনের মো: মুয়ীদুর রহমান বাকি বাদী হয়ে বরিশাল বন্দর থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ এনে ৪২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ১৫/২০ জন বহিরাগত আসামী রেখে একটি মামলা দায়ের করেন।

২০২৩ সালের ১৬ আগষ্ট ববি’র মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের আয়াত উল্লাহ হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ এনে বরিশাল বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামী হয় চিহ্নিত সেই মোবাশ্বির রিদমসহ ববি’র ৮ শিক্ষার্থী এবং অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জন।

গত ২৭ জানুয়ারি কুয়াকাটা সৈকতে মাতাল অবস্থায় ব্যাবসায়ীকে মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা হয় তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। গত ৩১ অক্টোবর গাঁজাসহ পুলিশের কাছে আটক হয় রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান রাফিন। জামিনে বের হয়ে মোবাশ্বের রিদমের সঙ্গে যুক্ত হয়। একাধিক মামলার আসামী এই গ্রুপটির অন্যতম সদস্য ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আল সামাদ শান্তকে গত ২ ফেব্রুয়ারী বিকেলে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঐ ঘটনার জেরে রাতেই বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারী এ গ্রুপের আরেক সদস্য ইংরেজি বিভাগের তানজিদ মঞ্জুর আদালতে জামিন আবেদন নামঞ্জুর হলে প্রক্টর অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় তার সাঙ্গপাঙ্গরা।

বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, ববি’র ছাত্র নামক সাইনবোর্ডটি ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতার পরামর্শে গত ১৩ই ফেব্রুয়ারী এই চক্রটির সঙ্গে গোপন বৈঠকে বসতে বাধ্য হয় কলেজ প্রশাসন।

শিক্ষা জীবনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম লিপ্ত থাকলে আইনের দৃষ্টিসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ব্যক্তিত্বের সুফল বয়ে আনবে না বলে ব্যক্ত করেছেন বরিশাল জেলা ও মহানগর আ.লীগের একাধিক নেতৃবৃন্দ। তারা জানিয়েছেন, দলের অঙ্গ সংগঠনের পরিচয় দিয়ে কেউ অপরাধ করলে পার পেয়ে যাবার সুযোগ নেই। কলেজ জীবনে শিক্ষা অর্জনের সময়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সকল অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন।

ববির আল আমিন নামের এক শিক্ষার্থী জানান, এখানে বর্তমানে রাজনীতি আর মারামারি ছাড়া অন্য কিছু হয় না। প্রায়ই ববিতেই বিভিন্ন ঘটনা গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হয়ে উঠে। আমরা এই শিক্ষার্থী হিসাবে এই অপরাজনৈতিক পরিহার চাই। সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু ভালোই কোন কিছু শিখতে চাই। আমরা যারা রাজনৈতিক করি না তারা বিভিন্ন সময় আতঙ্কে থাকী কখন আমাদের উপরেও কোন না কোন ভাবে হামলা হয়।

ববি’র প্রক্টর ড. মোঃ আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমার কক্ষে তালা দেবার ঘটনা সত্য। যারা তালা দিয়েছিল তাদের কিছু দাবি ছিল। বিষয়টি তখন ভিসি (উপাচার্য) স্যারকে জানানো হয়।

ববি’র উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ড. মোঃ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে এখন নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে রাখা হয়েছে। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বজায় রাখতে প্রয়োজনে আমরা আরো কঠোর হবো৷

বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর মুকুল বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এর গুটিকয়েক চিহ্নিত শিক্ষার্থীই বারবার নানা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। তাদের তালিকা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে গেলেই বাঁধার সম্মুখীন হয়। বিষয়টি দুঃখজনক। আশা করি, ববি’র সকলেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *