লতিফুর রহমান: ছোটবেলায় পড়েছিলাম নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকা মানে হচ্ছে লক্ষ্যহীন নৌকার মতো। অর্থাৎ ‘এইম ইন লাইফ’ ছাড়া জীবনে সফলতা সম্ভব না। অথচ লেখক জেমস ক্লিয়ার এটা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। তিনি বললেন,
১. একই লক্ষ্য থাকার পরও খেলাধুলায় কেউ বিজয়ী ও কেউ পরাজিত হয়। তাহলে নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াও আরও কিছু রয়েছে যা সফলতার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
২. লক্ষ্য অর্জনের পর মানুষ হতাশায় ভুগে। কারণ লক্ষ্য অর্জনের পর কী করবে সেটা বুঝতে পারে না। অলিম্পিকে সোনা জিতে অনেকের নাকি এমন দশা হয়েছে।
৩. অনেক সময় লক্ষ্য অর্জনের পর সেটা ধরে রাখা সম্ভব হয় না। যেমন- পরীক্ষার আগে রাতদিন পড়াশোনা করি কিন্তু পরীক্ষা শেষে বই আর ছুয়েও দেখি না। বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য নামাজ পড়ি। বিপদ কেটে যেতেই আল্লাহকে ভুলে যাই।
৪. প্রতিবার আমার লক্ষ্য থাকে ঘর পরিস্কার রাখা। তাই কিছুদিন পরপর সময় নিয়ে পরিশ্রম করি। এর মানে হচ্ছে রেজাল্টকে সমস্যা মনে করছি। অথচ যেই অপরিস্কার অভ্যাসের কারণে ঘর নোংরা হয় সেটাকে সমস্যা মনে করা উচিত।
এজন্য লক্ষ্য অর্জনের চাইতে অভ্যাসকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন লেখক জেমস ক্লিয়ার।
এদিকে আরেক জনপ্রিয় লেখক সাইমন সিনেক বলেন, Goal বা লক্ষ্য থাকার যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেটার সমাধান হচ্ছে ‘ভিশন’।
গোল হচ্ছে এমন বিষয় যেটার নির্দিষ্ট মাইলস্টোন রয়েছে। কিন্তু ভিশনের কোনো মাইলস্টোন নেই। যেমন ডাক্তার হয়ে মানুষের উপকার করা। দোকানদারের ভিশন হচ্ছে ক্রেতার কাছে সর্বদা কোয়ালিটি পণ্য বিক্রি করা। অর্থাৎ মরণের আগ পর্যন্ত ভিশনের পেছনে মানুষ ছুটবে।
তাই আগামী একমাসে ৩ কেজি ওজন কমাবো এটা হচ্ছে গোল। কিন্তু ভিশন হচ্ছে সর্বদা সুস্থ থাকা। ফলে ওজন টার্গেটের মধ্যে এলেও সর্বদা স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে।
তাদের কথাবার্তা থেকে যেটা বুঝেছি সেটা হচ্ছে গোল, ভিশন ও অভ্যাস সবই গুরুত্বপূর্ণ। একেক বিষয় একেক রকম উপকারের জন্য।
শেষ করছি জেমস ক্লিয়ারের একটা কথা থেকে। তিনি বলছেন, মানুষ যদি প্রতিদিন শতকরা এক ভাগ উন্নতি করে তাহলে বছর শেষে তার ৩৭ গুণ উন্নতি হবে।
তাই আসুন, নিজের ভিশন ঠিক করি। সেটাকে ভেঙে ছোট ছোট টার্গেট সেট করি এবং দিনে দিনে কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তুলি।