সমাজে হিংসা-হানাহানি বিদ্বেষ দূর করে পারস্পরিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ‘সালামের’ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। ‘সালাম’ শব্দটি মহান রাব্বুল আলামীনের গুন বাচক নাম “সালাম” ইসলামের একটি অন্যকতম বিধান। হযরত আদম (আ:) হতে শুরু করে প্রত্যেক নবীর যুগেই সালামের প্রচলন ছিল এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) আনীত দ্বীনে এর প্রচলনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী তিনটি বিশেষ সুন্নতের ওপর আমল করলে প্রিয় নবি হযরত মুহম্মদ স. অধিকাংশ সুন্নতের ওপর আমল করা সহজ হয়। এর মধ্যের অন্যনতম হলো সমাজে বেশি বেশি সালামের প্রচলন করা। আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা। ধর্ম ও জীবন এই পর্বে এ সম্পর্কে লিখেছেন হাফেজ মাওলানা মানজুরুল হক, মুহতামিম, বাইতুল ফালাহ মাদরাসা ও এতিমখানা, আফতাব নগন, বা্ড্ডা, ঢাকা
সহি শুদ্ধভাবে সালাম দেয়ার মাসায়েল:
১. আসসালামু-এর হামযা এবং মীমের পেশকে স্পস্ট করে উচ্চারণ করা! (মুসলিম)
২. পরিচিত-অপরিচিত, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলকে সালাম দিবে মাতা-পিতা স্বামী, ছেলে-মেয়ে সকলকেই সালাম করবে! অনেকে মাতা-পিতা, ছেলে-মেয়ে বা স্বামীকে সালাম দিতে লজ্জা বোধ করে! অথচ এই লজ্জা ঠিক না! কয়েক দিন সালাম দিলেই এ লজ্জা কেটে যাবে! লজ্জা করে সালামের মত একটি ফযীলতের আমল থেকে বঞ্চিত হওয়া বোকামি (বুখারী ও মুসলিম)
৩. সওয়ারী ব্যক্তি পায়ে চলা ব্যক্তিকে, চলনেওলা বসা বা দাঁড়ানো ব্যক্তিকে, আগন্তুক অবস্থানকারীকে, কম সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে এবং কম বয়সী ব্যক্তি অধিক বয়সীকে আগে সালাম করবে এটাই উত্তম।
৪. সালামের সময় হাত দিয়ে ইশারা করবে না বা হাত কপালে ঠেকাবে না কিংবা মাথা ঝুকাবে না! তবে দূরবর্তী লোককে সালাম করলে-যার পর্যন্ত আওয়াজ না পৌছাঁর সম্ভাবনা রয়েছে-সেরুপ ক্ষেত্রে শুধু বোঝানোর জন্যে হাত দিয়ে ইশারা করা যেতে পারে। আমাদের অভ্যাস হল প্রয়োজন না থাকলেও আমরা সালাম প্রদান করার সময় হাত উঠাই এটা ঠিক না
৫. হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান, ইয়াহুদী প্রমুখ অমুসলিমকে সালাম করবে না তবে বিশেষ প্রয়োজনে নিজের ক্ষতির আশংকা থেকে বাচাঁর জন্যক একান্তই কিছু বলে যদি তাকে অভিবাদন জানাতেই হয়, তাহলে “গুডমর্নি ” “গুড ইভিনিং “বা শুভ-সকাল ইত্যাদি কিছু বলে অভিবাদন করা যায় (মুসলিম)
৬. কোন মজলিসে মুসলিম অমুসলিম উভয় প্রকারের লোক থাকলে মুসলমানদের নিয়তে সালাম দিবে কিবা নিম্নরূপ বাক্যেও সালাম দেয়া যায় (আসসালামু আলা মানিত্তাবা আল হূদা) (বুখারী ও মুসলিম)
৭. কিছ লোককে আবার সালাম দেয়া নিষিদ্ধ অর্থাৎ মাকরূহ (ক) কোন পাপ কাজেরত ব্যক্তিগনকে (খ) পেশাব-পায়খানায়রত লোককে (গ) পানাহাররত ব্যক্তিকে (ঘ) ইবাদত রত ব্যক্তিকে (ঙ) কোন মজলিসে বিশেষ কথা-বর্তা বলার মুহুর্তে, কথা -বার্তায় ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও সালাম করা উচিত না (চ) গায়রে মাহরাম নারী-পুরুষের মধ্যে যেসব ক্ষেত্রে ফেতনার আশংকা থাকে সেখানে সালাম আদান – প্রদান নিষিদ্ধ। কোন খালি ঘরে প্রবেশ করলে সেখান-ও সালাম দিতে হয়। সেক্ষেত্রে “আসসালামু আলাইনা অ আলা ইবাদিললাহি অথবা “আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল বাইতিস সালিহীন”।
সহীহ্ বোখারী ও মুসলিম শরীফ অবলম্বনে।