কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে প্রকৃতির অলংকার হয়ে উঠেছে হলুদ সরিষার ফুল। চারদিকে তাকালে শুধু হলুদ আর হলুদ। ফুলের এই সমারোহ দু-চোখ জুড়িয়ে দেয়। আর ফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছিরা।
উপজেলার জাঙালিয়া, চরফরাদী, এগারসিন্দুর, বুরুদিয়া, পাটুয়াভাঙা, হোসেন্দী, নারান্দী, চণ্ডিপাশা, সুখিয়া এবং পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সূর্যের কিরণ প্রতিফলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরিষা ফুলের সমারোহে হেসে ওঠে চারদিক। এ যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আর এর মাঝে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, তেল জাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির জন্য রোপা আমন এবং বোরো ফসলের মধ্যবর্তী সময়ে এই সরিষা আবাদ করে কৃষক সহজে লাভবান হতে পারে। পাশাপাশি দেশে তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারবে। সে লক্ষ্যে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেন কোনো জমি পতিত না রেখে সরিষা আবাদ করে। এ বছর উপজেলায় ৪৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। এ কারণে তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি।
উপজেলার কলাদিয়া গ্রামের জুয়েল মিয়া জানান, তিনি প্রথমবারের মতো চার বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। এতে খরচ মিটিয়ে তিনি লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
কৃষক জুয়েল রানা, মামুন ও সুরুজ আলী একই সুরে জানান, আমন ধান ঘরে তোলার পর খালি জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। কম পুঁজিতে সরিষা চাষে লাভও দ্বিগুণ পাওয়ার আশা করছেন।
কলাদিয়া ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে ৫ থেকে ৬ মণ সরিষা উৎপাদন করা যায়। বাজারে মণ প্রতি সরিষার দাম ১০-১২ হাজার টাকার মতো। এতে খরচ মিটিয়ে কৃষকেরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হন। পতিত জমিতে দিন দিন সরিষা আবাদ বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুরে-ই আলম জানান, সরিষার আবাদ করলে একদিকে যেমন ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পায়, অপর দিকে মাটির স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হয়। বর্তমানে সরিষা আবাদে উন্নত জাত থাকায় মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ দিনে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১.৫ টন সরিষা উৎপাদন হচ্ছে। সরিষার জমিতে বিভিন্ন উপকারী পোকা যেমন লেডিবার্ড বিটল, ক্যারাবিট বিটল, ড্রাগন ফ্লাই, ড্যামসেল ফ্লাই পোকার প্রচুর আগমন ঘটে। ফলে যে জমিতে সরিষা চাষ হয়, বোরো মৌসুমে ওই জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণ কম হয়। পাশাপাশি সরিষার মূলের রসে এলোপ্যাথিক বৈশিষ্ট্য থাকায় মাটিবাহিত রোগ জীবাণু কম থাকে। ফলে সার্বিকভাবে মাটির স্বাস্থ্যের গুণগত পরিবর্তন হয়।
কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, সরিষা উৎপাদনের জন্য জমি তৈরির সময় চাষের কারণে মাটিতে বাতাসের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, ফলে মাটির বুনট ফসল উৎপাদনের জন্য সহায়ক হয়। ফলে বোরো মৌসুমে জমিতে কম চাষের প্রয়োজন হয়। কাজেই সরিষা চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব শুধু তেল উৎপাদনেই নয়, কৃষি পরিবেশ উন্নয়নেও এর ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া সরিষার জমিতে মধু সংগ্রহের জন্য প্রচুর মৌমাছির আগমন ঘটে। ফলে প্রকৃতিতে অন্যান্য ফসলের পরাগায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সরিষা চাষে কৃষকদের সকল প্রকার সহযোগিতা করছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম