দীর্ঘ বছর ধরে দুর্যোগপ্রবণ রাঙ্গাবালী উপকূলীয় অঞ্চলটি এখনও সুরক্ষিত নয়। সাগর ও নদী বেষ্টিত এই দ্বীপে বাঁধের অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে, যা এলাকার মানুষের জীবনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। বিশেষ করে চরনজির, চরকাশেম, চরহেয়ার-এ এখনো বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি, যা আরও ভয়াবহ দুর্যোগের মুখে পড়তে পারে।
বছরের পর বছর গতেও রাঙ্গাবালীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কার্যক্রম এগোয়নি, যার ফলে এখানকার জনগণের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে মোট ১৮৭ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে, এসব বাঁধের অধিকাংশ এখন নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে, বাঁধগুলোর উচ্চতা বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল, যা এখনও করা হয়নি।
অথচ, পুরনো বাঁধগুলো যেখানে থাকছে, সেগুলোর বেশিরভাগ জায়গায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়ে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিছু এলাকায় বাঁধের উচ্চতা কম, কিছু বাঁধ ভেঙে গেছে, আবার কিছু জায়গায় বাঁধের অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। ফলে যখনই দুর্যোগ আসে, বাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়ে, যার কারণে কৃষক ও মৎস্যজীবীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা নেছার হাওলাদার বলেন, “বাঁধ ভেঙে আমাদের বসতবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। আমাদের এখানে বাঁধের উচ্চতা কম হওয়ায় যখনই নদীর পানি বাড়ে, তখন তা আমাদের বাড়ির কাছে চলে আসে। টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হলে আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।”
ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চরইমারশন গ্রামের হেলাল খান বলেন, “বাঁধ ভেঙে আমাদের পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে যায়, ফসল নষ্ট হয়। প্রতিবার বন্যা বা ঝড় আসলে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, “রাঙ্গাবালী উপজেলার অধিকাংশ বেড়িবাঁধ বর্তমানে খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বাঁধের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠের উঁচু হওয়ার কারণে পুরনো অবস্থা থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তবে, এসব বাঁধের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতে বাঁধগুলোর উঁচু করার কাজও শুরু হবে। বর্তমানে বিভিন্ন দুর্যোগের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে বিশ্বের উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় এই উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।”
পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার অবস্থান বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে। এটি পটুয়াখালী সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রাঙ্গাবালী ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে চরভূয়া, চালিতাবুনিয়া, ছোটবাইশদিয়া, বড়বাইশদিয়া, এবং কাচিয়া ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত। এখানকার প্রধান অর্থনৈতিক কার্যকলাপ হচ্ছে মৎস্যজীবিতা, কৃষি এবং বাণিজ্য। তবে, সাগর ও নদী বেষ্টিত এই অঞ্চলটি বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে আসছে, যার ফলে এখানকার জনগণের জীবনযাত্রা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।