শিরোনাম

পটুয়াখালী, বরগুনায় বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্ক

Views: 82

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: মঙ্গলবার ভোরে ওজু করতে বাড়ির পুকুরঘাটে গিয়েছিলেন বরগুনার আমতলীর আঙ্গুলকাটা গ্রামের রেজিমন বিবি (৫০)। সে সময় কোনো একটি বিষধর সাপ দংশন করে তাকে। এতে ১০ মিনিটের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। স্বজনরা দ্রুত তাকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রেজিমন বিবিকে ঠিক কোন সাপে কামড়েছিল তা ঘটনার আকস্মিকতা ও অল্প আলোর কারণে বুঝতে পারেননি তিনি। তবে কামড়ের পর দ্রুত মৃত্যুর কারণে তার স্বজন ও প্রতিবেশীদের ধারণা হয় যে সাপটি ছিল রাসেল ভাইপার।

পরে এমন ধারণাই আতঙ্ক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আঙ্গুলকাটা গ্রামসহ পুরো গুলিশখালী ইউনিয়নের বাসিন্দাদের ভেতর। এখন এই ইউনিয়নে সন্ধ্যার পর রাস্তায় লোক চলাচল কমে গেছে। যারা বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন তাদের হাতে থাকছে লাঠি ও টর্চ।

তীব্র বিষধর রাসেলস ভাইপার স্থানীয়ভাবে চন্দ্রবোড়া ও উলুবোড়া নামেও পরিচিতি। সাপটি দেখতে অনেকটা অজগরের বাচ্চার মতো। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতে কাজ করতে এসেছিলেন স্কটিস সার্জন প্যাট্রিক রাসেল। ১৭৯৬ সালে তিনি এই সাপ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তার নাম অনুসারে এই সাপের নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশে ২০০২ সালে প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন রাসেলস ভাইপারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। সাপটি মূলত শুষ্ক অঞ্চলের; বিশেষ করে বরেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা হলেও এখন উপকূলীয় এলাকার কয়েকটি জেলাসহ অন্তত ৩৫টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা। আর প্রায়ই এসব এলাকা থেকে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুর খবর আসছে। ফলে সাপটি নিয়ে জনপরিসরে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি সেই পরিমাণ ভয় ও আতঙ্কও তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার সাপের কামড়ে মারা যাওয়া রেজিমন বিবি আঙ্গুলকাটা গ্রামের আরশেদ আলীর স্ত্রী।

আরশেদ আলী বলেন, ‘কামড় দেওয়ার খুব অল্প সময়ের মধ্যে মৃত্যু হওয়ায় আমরা ধারণা করছি সাপটি ছিল রাসেলস ভাইপার।’

এ সম্পর্কে এলাকাবাসীরও একইরকম ধারণা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিনের ভাষ্য, সাপের কামড়ে রেজিমন বেগমের মৃত্যুর পর তাদের গ্রামসহ পুরো ইউনিয়নে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর গ্রামের লোকজন তেমন একটা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।

আরো পড়ুন : ভূতুড়ে কৃষি ঋণের ফাঁদে পটুয়াখালীর মৃতরা

স্থানীয় বাসিন্দারা এমনও ধারণা করছেন যে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেসে এসে রাসেলস ভাইপার এই এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞদেরও অভিমত, রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু এবং পদ্মা অববাহিকা ধরে কচুরিপানায় ভেসে এর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার রেকর্ড আছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমনিতেই বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব বাড়ে। তাই এ সময়টিতে সবাইকে সাবধানে চলাফেরা করতে পরামর্শ দেন তিনি।

রাসেলস ভাইপারের সাপের কামড়ে শরীরের দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে আসা, পক্ষাঘাত এবং কিডনি ও ফুসফুসের ক্ষতিসহ বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দিতে পারে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু হয়।

এই প্রজাতির সাপের কামড়ের কিছুক্ষণ পরই দংশিত স্থানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ব্যথার পাশাপাশি জায়গাটি দ্রুত ফুলে যায় এবং ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কাছাকাছি আরও কয়েকটি অংশ আলাদাভাবে ফুলে যায়। আবার সাপটিকে অনেকে অজগরের বাচ্চা ভেবেও ভুল করে। এমন ভুলেই রাসেলস ভাইপারের কামড়ে ফরিদপুরে এক সাপুড়ের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।

সাপের কামড়ে রেজিমন বেগমের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *