চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: তীব্র গরমে চলতি বছর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আগেভাগেই সাপের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় সাপেকাটা ও এতে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সাপের দংশনে মৃত্যুর সংখ্যা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের (এসআরটিবি) সহযোগিতায় ডিএমপির দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রচারণা সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিএমপির শাহআলী ও দারুস সালাম থানা এবং এর অন্তর্গত পুলিশ ফাঁড়ির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ মিরপুরের স্থানীয় শতাধিক মানুষ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
সাপ উদ্ধার ও উপযুক্ত পরিবেশে অবমুক্ত করার কাজে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, বেশকিছু প্রজাতির সাপের প্রজনন মৌসুম নিকটবর্তী হওয়ায় এবং গরমে আরামদায়ক পরিবেশের সন্ধানে সাপ জলা-জঙ্গল ছেড়ে ফাঁকা ঘরবাড়ি ও বাসগৃহসংলগ্ন ছায়াযুক্ত পরিবেশে চলে আসছে। এতে মানুষের সঙ্গে সাপের সংঘাত ও সাপেকাটার ঘটনা বেড়ে গেছে।
সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে এসআরটিবির বক্তারা বলেন, মানুষের বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকেও সাপ উদ্ধারের আহ্বান পাওয়া যায়। পুলিশ সদস্যগণ সাপের দংশনে করণীয় বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞান অর্জন করলে গ্রাম ও শহরে বসবাসকারী মানুষকে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে জীবন রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। ব্যাপকভাবে কমে আসবে সাপের দংশনে মৃত্যুর সংখ্যা।
প্রতিবছর সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন উল্লেখ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত এসব তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা সাপে কাটা রোগীকে ওঝার কাছে না পাঠিয়ে অনতিবিলম্বে সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
এসআরটিবির স্বেচ্ছাসেবী মো. জোবায়দুর রহমান মেহেদি বলেন, সাপে কাটার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে রোগীর শরীরে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করার মাধ্যমে মৃত্যুহার বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
খাদিজাতুল কোবরা বেলী নামে এক নারী স্বেচ্ছাসেবী বলেন, সাপ সম্পর্কিত প্রাচীন মতবাদ ও ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে মৃত্যুর হার বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১০৫ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এরমধ্যে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় এমন বিষধর সাপের সংখ্যা ১০টি। বাকিগুলো দুর্লভ বললেই চলে। সুতরাং আমরা যদি একটু সচেতন হই, খুব সহজেই এতো অল্পসংখ্যক সাপের কামড় থেকে জনগণকে বাঁচাতে পারি।
সাপের প্রজাতির ধারণা দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী আল আমিন হোসেন জানান, দাঁড়াশ সাপ, ঘরমনি, জলধোড়া, দুধরাজ, লাউডগা, কালনাগিনী, হেলে প্রভৃতি উপকারী ও বিষহীন সাপের পাশাপাশি পদ্ম গোখরা, খৈয়া গোখরা, রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া), কালাচ, শঙ্খিনী প্রভৃতি বিষাক্ত প্রজাতির সাপের দেখা মেলে।
সম্প্রতি বিষযুক্ত রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ উদ্ধারের ঘটনা উল্লেখ করে এসআরটিবির স্বেচ্ছাসেবী সাদ আহমেদ অপু বলেন, এই সাপকে অনেকে অজগরের বাচ্চা ভেবে হেলাফেলা করেন। অসচেতনতার কারণে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষাসহ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্টি, চোরা শিকারি ও বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
দারুস সালাম জোনের এসি মফিজুর রহমান পলাশ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এ সময় দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল উদ্দিন, শাহআলী থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. হাবিবুর রহমান, বিভিন্ন ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশ সদস্যসহ বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি সাব্বির আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।