পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী সরকারি ডিগ্রী কলেজে রাজনৈতিক প্রভাব, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ইউএনও`র কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২১ আগস্ট) বেলা ১টায় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামের সাথে দেখা করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রবিবার থেকে কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন অভিযুক্ত অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আসাদুজ্জামান। বিক্ষোভ মিছিলে ২শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন।
২০১৮ সালে কলেজটি জাতীয় করণের পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান গত ৬ বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তুলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা ফেইসবুকে পোস্ট করেন এবং কলেজের দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ পেয়ে ১৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক মো. সাইফুল ইসলাম সিয়ামসহ সাধারন শিক্ষার্থীরা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চান এবং ১৮ তারিখ রবিবার কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, ছাত্র-সুধীজনকে উপস্থিত থাকার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম সিয়াম। পূর্ব ঘোষনানুযায়ী রবিবার (১৮ জুলাই) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কলেজে উপস্থিত হলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ঐদিন কলেজে উপস্থিত না হয়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে একটি ছুটির আবেদন পাঠিয়ে দেন। পরে কলেজের শিক্ষকমণ্ডলী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় কলেজ মিলনায়তনে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন উপস্থিত শিক্ষকমন্ডলীর কাছে। এতে এক বছরে সম্ভাব্য হিসেব অনুযায়ী ১ কোটি ৯৭ লক্ষ ৭১ হাজার ৭৫০ টাকার হিসাব তুলে ধরেন এবং ৬ বছরে ১১ কোটি ৮৬ লক্ষ ৩০ হাজার ৫০০ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা। পরে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে অধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকায় কলেজের সিনিয়র শিক্ষক বাবু রসিকলাল কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক মো. সাইফুল ইসলাম সিয়াম বলেন, আমরা আজ বুধবার (২১ আগস্ট) কলেজে গিয়েছিলাম অধ্যক্ষ স্যার আসছেন কিনা জানতে। কিন্তু তিনি আসেননি। আমরা শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে ইউএনও ’র কার্যালয় গিয়ে ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি, তিনি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন এবং আশু সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে আধিপত্য বিস্তার করে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। ২০১৮ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারপ্রাপ্তের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার পরে কলেজের কোন হিসাবনিকাশ কারো কাছে নেই। সাবেক অধ্যক্ষ স্যার অবসরে যাওয়ার পরে কলেজ ফান্ডে টাকা রেখে যান তা ভুয়া ভাউচার করে উত্তোলন করেন অধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে সুবিদখালী সরকারি ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমার বিরুদ্ধে যে-সব অভিযোগ তোলা হয়েছে এসব ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। ছাত্ররা প্রত্যেকে কলেজ একাউন্টে টাকা জমা দেয়। এখানে অনিয়ম করার কোনও সুযোগ নেই। অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়ার কারণে তারা এটা করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম জানান, বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা এসেছিল, তাদের দাবি শুনেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি,আশা করি দ্রুত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে।