শিরোনাম

স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন, বাঙালির আত্মপ্রকাশের সূচনা

Views: 55

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক : আজ ১০ এপ্রিল, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি গোপন স্থানে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) নির্বাচিত করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার। নবগঠিত সরকারের সবাই ছিলেন ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধি। আর এ সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথচলা।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) বাঙালি নিধনে নৃশংস গণহত্যাযজ্ঞ শুরু করে পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরা। পরদিন প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। কিন্তু গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সেই বার্তা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

সরকারের নবনির্বাচিত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পরে তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন। মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে সেদিন আরও তিনজনকে নির্বাচিত করা হয়। তারা হলেন- খন্দকার মোশতাক আহমদ (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ), এম মনসুর আলী (অর্থ বাণিজ্য ও শিল্প) এবং এএইচএম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পূর্নবাসন ও কৃষি)।

জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নতুন সরকারের সামনে দেখা দেয় তিনটি চ্যালেঞ্জ। একদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বিশ্ব জনমত গঠনের মাধ্যমে স্বীকৃতি আদায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা। এই তিন বিষয় নিয়ে জোর তৎপরতা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ১০ এপ্রিল সরকার গঠনের পর ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর নামে বৈদ্যনাথতলা গ্রামের নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। এ জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশের প্রথম সরকার মুজিবনগর সরকার নামেও সমধিক পরিচিত।

১১ এপ্রিল স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাজউদ্দিন আহমদ প্রথম একটি বেতার ভাষণ দেন। যা মুক্তিকামী বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে বিশ্ব জনমত গঠনের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছিল। সেদিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের বীর ভাই-বোনেরা বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মুক্তিপাগল গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সরকারের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের আমার সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড় প্রমাণ লাশের নিচে পাকিস্তানের কবর রচিত হয়েছে। জেগে উঠেছে একটি নতুন জাতি।’ ভাষণের শেষাংশে তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “যারা আজ রক্ত দিয়ে উর্বর করেছেন বাংলাদেশের মাটি, যেখানে উৎকর্ষিত হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন মানুষ। তাদের রক্ত আর ঘামে ভেজা মাটি থেকে উঠুক নতুন গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, গণমানুষের কল্যাণে সাম্য আর সুবিচারের ভিত্তিপ্রস্তরে লেখা হোক ‘জয় বাংলা’, ‘জয় স্বাধীন বাংলাদেশ’।”

এই ভাষণে তিনি দেশজুড়ে পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি এ কথাও বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো এক স্থানে (কৌশলগত কারণে স্থান জানানো হয়নি)। এ ছাড়া ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভার শপথের তারিখও ঘোষণা করেন। প্রবাসী সরকার তখন এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইনিভাবে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকেও দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *