শিরোনাম

হাতে ভাজা মুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত পিরোজপুর উদ্যোক্তারা

Views: 84

বরিশাল অফিস:; পিরোজপুরে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদার জোগান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উদ্যোক্তারা। তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকা উদ্যোক্তারা কাঁচা মালের (ধান) দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন মুনাফা অর্জনে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি মেশিনে ভাজা মুড়ি বাজার দখল করায় হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা আগের থেকে কিছুটা কমেছে। তাই আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে এ শিল্পের উদ্যোক্তার সংখ্যাও। ফলে বাজারে যারা টিকে আছেন তারাও যেন ছাড়তে চাইছেন এই শিল্প।

প্রায় অর্ধশত বছর ধরে হাতে ভাজা মুড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বেশ কিছু মুড়ি শিল্প উদ্যোক্তা ও কারিগর। ৫০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় তারা শত তড়াই-উতরাই পেরিয়েও টিকে আছেন এই পেশায়। রমজান কেন্দ্র করে ব্যস্ততা বেড়েছে কারিগরদের। দিনের ১২ ঘণ্টা আগুনের জ্বালে মুড়ি ভাজছেন বেশ কিছু কারিগর। বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রভাব পড়ছে এই পেশাতেও। দিনভর পরিশ্রম করেও চাহিদা অনুযায়ী মুনাফা অর্জন করতে পারছেন না কারিগররা। ধানের দাম বেশি হওয়ায় মুড়ির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে খুব বেশি লাভ করতে পারছেন না পাইকাররাও।

নাজিরপুর উপজেলার মালিখালী ইউনিয়নের লড়া গ্রামের মুড়ির কারিগর নমিতা রাণী বলেন, তিন ঝিকের ৩ চুলায় ৩টি পাত্রে দুজন বসে মুড়ি ভাজতে হয়। প্রথমে ১/২দিন আগে মোটা চাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। এর পর সেই চাল পানি ঝরিয়ে চুলায় থাকা মাটির তাওয়ায় চালে লবণ পানি দিয়ে এক মুঠো নারকেল পাতার শলা দিয়ে নাড়তে থাকি। চালের লবণ পানি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে একই জায়গায় অন্য চুলার ওপর থাকা আরেকটি তাওয়ায় সেই চাল ঢেলে দেই। এরপর অন্য আরেকজন আবারও শলা দিয়ে নাড়াতে থাকে। এক পর্যায় চালগুলো প্রচণ্ড গরম হয়ে লাল হয়ে গেলে অপর একটি চুলায় থাকা মাটির পাতিলে তপ্ত বালুর মধ্যে ঢালা হয়। পরে সেই পাতিল চুলা থেকে তুলে হাতে ধরে নাড়াতে থাকে। এভাবে চালগুলো মুড়িতে পরিণত হয়। এরপর সেই মুড়িগুলো অন্য একটি পাত্রে ঢেলে রাখি।

প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা চুলার আগুনের তাপের মধ্যে শ্রম দিচ্ছেন এই শিল্পে। পালা করে দুই দুজন করে চারজন তিন থেকে সাড়ে তিন মণ চালের মুড়ি ভাজতে পারেন তারা। অন্য কোনো কাজ না থাকায় তারা এ কাজ করেই সংসার চালিয়ে থাকেন।

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা মালিখালী ইউনিয়নের লড়া গ্রামের মুড়ি শিল্প উদ্যোক্তা সুনিল চন্দ্র বেপারি বলেন, আমি এই মুড়ির কারবার করি ২০/২৫ বছর ধরে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মুড়ির ধান প্রতি মণ ১৮শ টাকা করে কিনে আনি। মুড়ি পাইকারি বিক্রি করি ১০৫/১১০ টাকা করে। এতে সামান্য কিছু লাভ হয়। ধানের দাম বেশি, এজন্য তেমন একটা লাভ হয় না। মিলের মুড়ির জন্য আমাদের এই মুড়ির চাহিদা কমে গেছে। তবে আমাদের মুড়ি খেতে খুবই সুস্বাদু। সরকার যদি এই শিল্পের প্রতি নজর দিত তাহলে আমরা ভালোভাবে চলতে পারতাম।

পাইকার নিত্যা নন্দ বিশ্বাস বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে মুড়ি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে গ্রাম ঘুরে ঘুরে মুড়ি কিনে থাকি। আমি সব মুড়ি কিনে নিয়ে বিভিন্ন হাটে পাইকারি বিক্রি করি। উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা করে কিনে নিয়ে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি করি। এতে বেশি লাভ হয় না। ধানের দাম বেশি বলে বেশি দামে কিনতে হয়। যা লাভ হয় মোটামুটি সংসারটা চলে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে মালিখালী ইউনিয়নের লড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ট্রেড ইন্সট্রাক্টর (ইলেকট্রিক্যাল) দিপঙ্কর সমাদ্দর বলেন, বাজারে আগে তো হাতে ভাজা মুড়ি ছাড়া অন্য মুড়ি পাওয়া যেতো না। মেশিনে ভাজা মুড়ি তো সেদিন থেকে শুরু হলো। আমরা দুই ধরনের মুড়ির মধ্যে হাতে ভাজা মুড়িটাকে ভালো মনে করি। কারণ হাতে ভাজা মুড়িতে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। হাতে ভাজা মুড়িতে কোনো সার ব্যবহার করা হয় না। সে কারণে খেতেও অনেক মজা হয়। হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা থাকলেও তেমন পাওয়া যায় না। সরকার যদি এদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে এ শিল্পটা টিকে যেত।

জেলা বিসিকের উপব্যাবস্থাপক আলী আজগর নাছির বলেন, মেশিনে রাসায়নিক সারে ভাজা মুড়ির দাম কম আর কাঁচা মালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হাতে ভাজা মুড়ি শিল্পের কারিগর কমে গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা থাকায় এ শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তাদের এ শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *