পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: ২১ জুলাই বিকেল ৫টা। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন ওবায়দুল। স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি এসে আহত দুজনকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যাওয়ার জন্য ওবায়দুলের গাড়ি ভাড়া করেন। গাড়িতে আহতদের উঠাতেই হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। কারণ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য যে দুজনকে তার গাড়িতে তোলা হয়েছে এর একজন তার একমাত্র সন্তান আমিনুল (১৬)।
ঘটনাটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকার। নিহত আমিনুল পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের অটোরিকশাচালক ওবায়দুল খানের ছেলে।
অভাবের সংসারে পরিবারের বাড়তি আয়ের জোগানদাতা আমিনুল মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় পাড়ি জমায় ২০২২ সালে। বসবাস করত দনিয়া এলাকায়। কাজ নেয় একটি বৈদ্যুতিক সুইচ নির্মাণ কারখানায়। পরিবারের হাল ধরতে কাজে যোগ দেওয়া এই শিশুশ্রমিকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে পুলিশের গুলি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা ওবায়দুল খান।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুলাই আমিনুল সারাদিন বাসায় ছিল। বিকেল ৫টার দিকে বাসার সামনে রাস্তায় গেলে মানুষের দৌড়াদৌড়ি দেখে ভয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশের ছোড়া একটি গুলি হঠাৎ এসে তার বুকের বাম পাশে ঢুকে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমিন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয় দুজন তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই হাসপাতালের সামনে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন ওবায়দুল খান। হঠাৎ দুই ব্যক্তি তাকে ডেকে আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি রাজি হন। আহতদের নিয়ে ওই দুজন রিকশায় ওঠার সময় ওবায়দুল দেখতে পান আহতদের একজন তারই একমাত্র ছেলে আমিনুল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংজ্ঞা হারান। অচেতন অবস্থায় তাকেসহ তার সন্তান গুলিবিদ্ধ আমিনুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক আমিনুলকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো পরিবার।
সম্প্রতি ভরিপাশা গ্রামে আমিনুলদের বাড়িতে গেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার বাবা বলেন, ‘সন্তানের লাশের বোঝা যে বাবা কাঁধে নেন তিনিই বোঝেন সন্তান হারানোর বেদনা। সন্তান হারানো এতটা কষ্টের, যা কাউকে বলে বোঝানো যায় না। যতদিন বাঁচি, এই বেদনা বয়ে যেতে হবে।’ ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিও করেন তিনি।
একমাত্র নাতির মৃত্যুতে পাগলপ্রায় আমিনুলের দাদি লাভলী বেগম। নাতির স্মৃতি মনে হলে এখনো কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
ভরিপাশা গ্রামে আমিনুলের কয়েক বন্ধুর (মনিরসহ) সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, আমিনুল ভালো ছাত্র ছিল। অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে না পারলেও সে খুব শান্ত ও নম্র প্রকৃতির ছিল। আমিনুল হত্যার বিচার দাবি করেন তারা।