শিরোনাম

১৬ বছরে মাসহ পরিবারের ২৬ স্বজনকে হারিয়েছেন আলতাফ

বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ১৬ বছরের কারাবাসের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বরগুনার ল্যান্স নায়েক আলতাফ হোসেন। দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি তার পরিবারের ২৬ স্বজনকে হারিয়েছেন, যার মধ্যে তার মা, বাবা, ভাইবোনসহ অনেক কাছের মানুষ ছিলেন। তবে এসময়ে একবারের জন্যও প্যারলে মুক্তি পাননি তিনি। এই সময়ে তার একমাত্র মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্নও পূর্ণ হয়নি।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর ২০০৯ সালের ৩ মার্চ তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) ১৩ ব্যাটালিয়নে যোগদান করেন আলতাফ হোসেন। কিন্তু ২৩ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং এরপর থেকে তার পরিবার নানা দুঃখ-কষ্টে দিন কাটায়। তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তার ছেলে রাফির বয়স ছিল ২ বছর এবং মেয়ে রিফার বয়স ছিল ৪ বছর। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ার কারণে তার স্ত্রী শিরীন সুলতানা একাই পরিবারের হাল ধরেন।

এই দীর্ঘ সময়ে শিরীন সুলতানা মামলার পাশাপাশি দুই সন্তানকে লেখাপড়া করানোর জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন ছিল তার, কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূর্ণ হয়নি। বর্তমানে আলতাফ হোসেন চাকরি ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল বিভাগীয় মামলা, হত্যা মামলা এবং বিস্ফোরক আইনে। বিভাগীয় মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড হয়, কিন্তু হত্যা মামলায় খালাস পান তিনি। বর্তমানে বিস্ফোরক আইনে মামলা চলমান। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বরগুনার তিনজন কারাগারে ছিলেন, তবে আলতাফ হোসেন একমাত্র জামিনে মুক্তি পান।

আলতাফ হোসেনের ছেলে আকিব হোসেন রাফি জানান, “দীর্ঘ ১৬ বছর বাবাকে ছাড়া আমাদের পথ চলাটা ছিল খুবই কষ্টকর। বাবা কেমন সেটা আমাদের জানার সুযোগ ছিল না। মা একাই আমাদের মানুষ করেছেন। এখন বাবাকে পেয়ে যে আনন্দ লাগছে, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।” তিনি সরকারের কাছে বাবার স্থায়ী খালাসের দাবি জানিয়েছেন।

আলতাফ হোসেন বলেন, “আমি মনে করেছিলাম, আর কোনোদিন মুক্তি পাব না। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আশায় বুক বাঁধি। আমি কোনো অন্যায় করিনি, তবে আমাকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবি করছি।”

আলতাফ হোসেনের স্ত্রী শিরীন শারমিন বলেন, “১৬ বছর একা থাকতে হয়েছে। শুধু একজন ভুক্তভোগী নারীই জানে এর কষ্ট কতটা। এখন জামিনে মুক্তি পেয়েছে আমার স্বামী। আমাদের একটাই দাবি, বিনা দোষে কেন আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে? আমরা সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার চাই। ক্ষতিপূরণসহ বেতন ভাতা পরিশোধের দাবি জানাই।”

মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম

image_pdfimage_print