বরিশালের সবচেয়ে প্রাচীন পাবলিক লাইব্রেরি এখন পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। অযত্ন ও অবহেলার কারণে লাইব্রেরি ভবনটি বর্তমানে চোর এবং মাদকাসক্তদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। লাইব্রেরির লোহার জানালা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস প্রতিদিন চুরি হয়ে বিক্রি হচ্ছে, এবং একসময় বরিশালের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পদচারণায় মুখরিত এই লাইব্রেরি এখন ভূতের বাড়ি হয়ে উঠেছে।
১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরিটি এক সময় ১৪ হাজার বইয়ের বিশাল সংগ্রহে সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৩ বছর আগে লাইব্রেরির দাপ্তরিক কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং ৯ বছর আগে লাইব্রেরিটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে লাইব্রেরির দরজা, জানালা, গেট, এবং অন্যান্য অংশ চুরি হয়ে গেছে, এমনকি বেশ কিছু মূল্যবান বইও চুরি হয়ে গেছে। এখনো কমপক্ষে ১০ হাজার বই অব্যাহতভাবে লাইব্রেরিতে রয়েছে, যা রক্ষা করা জরুরি বলে জানান পাবলিক লাইব্রেরির অফিস সহায়ক শহীদ গাজী।
অথচ এই লাইব্রেরির ভবনটি ১৮৫৪ সালে বরিশালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যখন পাবলিক লাইব্রেরি অ্যাক্ট পাস করা হয়। ১৯৮৫ সালে লাইব্রেরিটি নগরীর বান্দ রোডে স্থানান্তরিত করা হয়, কিন্তু সেখানে থাকা অবস্থায়ও ২০১৮ সালের পর থেকে এটি ধ্বংসের পথে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লাইব্রেরির প্রধান ফটক সারাদিন বন্ধ থাকে, জানালার কাচগুলো ভাঙা এবং ভবনের বিভিন্ন অংশে আগাছা ও পলেস্তরা খসে পড়ছে। কিছু স্থান মোটরসাইকেল গ্যারেজ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সন্ধ্যার পর তা মাদকসেবিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
এ বিষয়ে পাবলিক লাইব্রেরির অফিস সহায়ক শহীদ গাজী জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন, তবে বর্তমানে লাইব্রেরিতে পাঠকরা আসে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে এই ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরির মূল্যবান বইগুলো রক্ষা করা যায়।
অপরদিকে, বরিশাল জেলার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, এই লাইব্রেরিটি পুনরুদ্ধারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানানো হচ্ছে, তবে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তিনি জানান, ২০১২ সালে লাইব্রেরির সদস্য সংখ্যা ছিল ১,১০০, যার মধ্যে ৬০০ জন আজীবন সদস্য এবং ৫০০ জন সাধারণ সদস্য ছিল।
বিভিন্ন সামাজিক ব্যক্তিত্বও এই লাইব্রেরির সংরক্ষণ এবং পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়ে আসছেন। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি তপংকর চক্রবর্তী এই লাইব্রেরির এক দীর্ঘ ইতিহাসের কথা তুলে ধরে বলেন, এটি সংরক্ষণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, শীঘ্রই লাইব্রেরি পরিদর্শন করে এটি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম