বরিশাল অফিস :: ছেলে নিখোঁজ ছিল দীর্ঘ ১৮ বছর। সন্তানের পথপানে চেয়ে থাকতে থাকতে বাবা-মা দিশাহারা।
ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে চোখে যেন ছানি পড়ে গেছে। হঠাৎ করেই অবসান হলো দীর্ঘ ১৮ বছরের অপেক্ষার।
নিখোঁজ হওয়ার ১৮ বছর পর সন্তানের দেখা পেলেন বাবা-মা। এতো বছর পর সন্তানকে ফিরে পাওয়ায় আনন্দে আত্মহারা বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ঘটেছে এমন ঘটনা। উপজেলার রায়হানপুর-কাকচিড়া পুরান ভাড়ানী খাল সংযোগ ও নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন পূর্ব লেমুয়া গ্রামের বাসিন্দা জেলে সেলিম মিয়ার বড় ছেলে শ্যাম্ভু। গত সোমবার বাড়ি ফিরে আসেন সেলিমের বড় ছেলে শ্যাম্ভু। পরিবারে মা-বাবা, ভাই সোহেল ও সেলিনা নামে বোন রয়েছে। শ্যাম্ভুর বর্তমান বয়স প্রায় ৩৪ বছর। যখন তিনি বাড়ি থেকে না বলে চলে যান তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর।
শ্যাম্ভুর বাবা সেলিম মিয়া বলেন, ২০০৫ সালের শেষের দিকে না বলে আমাদের সন্তান বাড়ি ছাড়ে, তখন বয়স ছিল ১৬ বছর, সেই থেকে বিভিন্ন জায়গায় আমরা খোঁজ করেছি কিন্তু কোথাও কোনো সন্ধান মেলেনি। ছেলেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। হয়ত আল্লাহ আমাদের ওপরে দয়া করে সন্তানকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সন্তানকে কাছে পেয়ে আমাদের পুরো পরিবার খুবই আনন্দিত।
বাবা সেলিম মিয়া বলেন, সিলেটে যে জায়গায় এতদিন সে বসবাস করেছে সেই মালিকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে সেখানে শ্যাম্ভুর তিনটি অটোরিকশা আছে। ছেলেকে পেয়ে আমরা খুশি। ছেলেকে নিয়ে সিলেটে যাব মালিকের সঙ্গে দেখা করে আমাদের সন্তান আমাদের কাছে স্থায়ীভাবে নিয়ে আসবো। তাছাড়া যার আশ্রয়ে এতো বছর থেকেছে তাদের তো ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।
শ্যাম্ভুর মা হাসি বেগম বলেন, সন্তান হারা মা কীভাবে থাকতে পারে? ১৮ বছর কীভাবে থেকেছি আমিই জানি। এতো বছর পর সন্তানকে পেয়ে মনে হয়েছে যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছি। আমার বুকটা ভরে গেছে। ভাবছিলাম ছেলেকে আর পাবো না, ছেলে আদৌ বেঁচে আছে কিনা তাও জানতে পারিনি। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে মনে হলো এখনই ভূমিষ্ঠ হয়েছে। আল্লাহ আমার বুক আবার ভরে দিয়েছেন।
ফিরে আসা ছেলে শ্যাম্ভু বলেন, চাকরির সন্ধানে বাড়ি থেকে না বলেই চট্টগ্রাম যাই। সেখানে তিন বছর ছিলাম। ওই তিন বছর বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। সেখান থেকে গিয়ে সিলেটে থাকা শুরু করি, এরপর আর বাড়ির কারো সঙ্গে যোগাযোগ নেই। এতদিন থাকার পর বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছিল, তাই ঠিকানা পুরোপুরি মনে না থাকা সত্ত্বেও অনুমান করে বাড়িতে পৌঁছাই। এতোটুকু মনে ছিল কাকচিড়া বাজারের পাশেই বাড়ি। সেই হিসাব করে কাকচিড়া বাজারে এসে বাবার নাম ধরে জিজ্ঞেস করতে করতে পৌঁছে যাই বাড়ি।
তিনি আরও বলেন, আমি এখনো কোনো সাংসারিক জীবনে আবদ্ধ হইনি। এখন বাড়িতেই বাবা-মাকে নিয়ে থাকতে চাই।