শিরোনাম

২ সন্তান-অসুস্থ মাকে নিয়ে চা বিক্রেতা প্রিয়াঙ্কার জীবন সংগ্রাম

Views: 80

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: প্রিয়াঙ্কা বণিক। বয়স ২৮ বছর। স্বামী মারা গেছেন এক বছর আগে, স্বামীই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার অবর্তমানে আট বছরে মেয়ে ঐশি, পাঁচ বছরের ছেলে পরম ও অসুস্থ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মাকে নিয়ে প্রিয়াঙ্কা বিপাকে পড়ে যান। বাউফল পৌর শহরের বাউফল বাজারে একটি টং দোকান দেন তিনি। সেখানে বিক্রি করেন চা, সিগারেট, পান, বিস্কুট, চকলেট, কেক ও রুটি। যা দিয়ে কোনো রকমে চলে প্রিয়াঙ্কা বণিকের সংসার।

বিগত এক বছর ধরে ওই স্থানে প্রতিদিন খুব ভোরে দোকান খুলে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান করেন তিনি। এর মাঝে দুপুরে রান্নার কাজে সল্প সময়ের জন্য বাড়িতে যান প্রিয়াঙ্কা। স্কুল থেকে সন্তানেরা বাসায় ফিরে পান না মায়ের আদর ভালোবাসা। এভাবেই প্রতিদিন চলছে তার বেঁচে থাকার লড়াই।

প্রিয়াঙ্কা বণিকের প্রতিদিনের বিক্রি হয় ৭০০-৮০০ টাকার মতো। সেখান থেকে আয় হয় দুই থেকে আড়াই শত টাকা। তিনি পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের বণিক বাড়ির বাসিন্দা।

প্রিয়াঙ্কা বণিক বলেন, ২০২৩ সালে আমার স্বামী মারা গেছে। সে এখানে কাঁচামালের ব্যবসা করতো। আমার দুটো সন্তান আছে। তাদের মানুষ করতে আমি বাজারে চায়ের দোকান দিছি। বড় মেয়ে ঐশী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ছোট ছেলে পরম শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী। এদেরকে মানুষ করার জন্য যুদ্ধ করতেছি। এই যুদ্ধে ভগবান কতদূর নেয় তা জানি নাহ।

আরো পড়ুন : রাজস্ব আয় বৃদ্ধি হলেই রাষ্ট্রের উন্নয়ন সমৃদ্ধি হবে – পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক

তিনি আরও বলেন, সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য প্রাইভেট দিতে হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া পরিপূর্ণ ভাবে দিতে পারি নাহ। তারপরও আমি চেষ্টা করছি। ভগবান যতদিন চায় সন্তানদের মানুষ করার জন্য আমি তৈরি। দুই বাচ্চা ও আমার মা আমার কাছে থাকে। মাও অসুস্থ, কিডনি দুইটাই নষ্ট হয়ে গেছে। মায়ের দেখভাল সবই করা লাগে আমার। সকাল ৫টার সময় দোকানে আসি আর দুপুর ২টার দিকে বাড়িতে যেয়ে রান্না-বান্না করা লাগে। রান্না-বান্না করে আবার দোকানে আসি। বিকাল ৫টার দিকে দোকান খুলি আর রাত ১০টার দিকে বাসায় যাই। এর মধ্যে বাচ্চারা কোথায় থাকে জানার মত ক্ষমতাও থাকে না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রিয়ঙ্কা আরো বলেন, আমার দুর্ভাগ্য যে রোডের পাশে ঠাঁই হয়েছে। স্বামী ব্লাড ক্যান্সার ছিল, কিডনি দুইটাই নষ্ট ছিল। যখন আমার ছেলের বয়স দেড় মাস তখন সে না বাঁচার মতো হয়ে যায়। এখানকার ডাক্তারা বলছে ঠিক হবে না, তখন ঢাকায় নিছি তারপর অসুস্থ অবস্থায় ব্লাড দিয়ে বেঁচে ছিল কিছুদিন। বছর হলো মারা গেছে। মারা যাওয়ার পর থেকেই আমার জীবন যুদ্ধ শুরু। যুদ্ধ কবে শেষ হবে ভগবান জানেন, আমি কিছু জানি না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশির গাজী বলেন, মা দিবসে বিশ্বের সকল মাকে মা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বাউফলের পৌরসভায় যিনি প্রিয়াঙ্কা বণিক নামে এক মা রয়েছেন। তিনি অত্যন্ত কষ্ট করে তার সন্তানদের মানুষ করছেন। তার বৃদ্ধা মাকেও তিনি লালন পালন করছেন। আমরা তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সাহায্য সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *