শিরোনাম

৪৬ দিনে কী ঘটেছিল জানতে চায় জাতিসংঘ

Views: 32

চন্দ্রদ্বীপ নিউজ :: ছাত্র-জনতার আন্দোলন কেন্দ্র করে গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪৬ দিনে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল; কতসংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছিল; কেমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল এবং এ জন্য কারাই বা দায়ী- এসবের বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছে জাতিসংঘ। এরই ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের প্রতিনিধিরা এখন বাংলাদেশে, চলছে তাদের নানামুখী তদন্ত। ইতোমধ্যে তাদের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দিয়ে একগুচ্ছ তথ্য জানতে চেয়েছে পুলিশের কাছে। জাতিসংঘের তদন্ত দলটি আন্দোলনকালে আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি, ভুক্তভোগী, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সে সময়কালের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের পর তা বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে।

জানা গেছে, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দিয়ে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে কতজন নিহত হয়েছেন, তাদের পেশাগত পরিচয় কী, কতজন আহত হয়েছেন, কতটি মামলা হয়েছে, কতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন মোকাবিলায় পুলিশ মোট কত রাউন্ড গুলি করেছে, আন্দোলনকালে কোন কোন কর্মকর্তা মাঠ পুলিশকে গুলির নির্দেশ দিয়েছে, পুলিশের গুলিতে কতজন মারা গেছে, কোন কোন এলাকায় সর্বাধিক সহিংসতা ঘটেছে, কী ধরনের সহিংসতা হয়েছে- এমন আরও নানা তথ্য জানতে চেয়েছে। এ ছাড়া ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের দিন পর্যন্ত কতজন হতাহত হয়েছে এবং ৫ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত কতজন হতাহত হয়েছে তা জানতে চেয়েছে পুলিশের কাছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত দলের চাহিদানুযায়ী ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে তথ্য আনতে পুলিশের সব ইউনিটে চিঠি দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। সদরদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ইউনিটের তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ পর্যায়ে। সব ইউনিট থেকে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর তা ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত দলের কাছে তা হস্তান্তর করবে পুলিশ সদর দপ্তর।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর আমাদের সময়কে বলেন, জাতিসংঘের তদন্ত দলের চাহিদানুযায়ী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ১ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু হয়। মধ্য জুলাইয়ের পর এই আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগ শুরু করে। এ সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বলপ্রয়োগে যুক্ত হয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাতেও। এর পর ছাত্রদের এ আন্দোলন সরকার পতনের একদফায় রূপান্তরিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ যুক্ত হন। তখন ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিচারে প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অপ্রতিরোধ্য স্রোতে ভেসে যায় শেখ হাসিনা সরকার। পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠিত স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথভাবে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১ হাজার ৫৮১ জন নিহতের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্যমতে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৩১ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। অনেক আহতের তথ্য একাধিকবার এসেছে এবং অনেকের নাম এখনো এ তালিকায় যুক্ত হয়নি বলেও জানান তারা।

জানা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলটি তথ্য প্রতিষ্ঠা, দায়িত্ব চিহ্নিত করা, মূল কারণ বিশ্লেষণ এবং অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে বাংলাদেশের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করবে। ঘটনাস্থলের পরীক্ষা এবং তথ্য বিশ্লেষণের পর, জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর একটি বিশদ মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করবে যার মধ্যে মূল ফলাফল, উপসংহার ও সুপারিশ থাকবে। তাদের প্রতিবেদনে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪৬ দিনে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল- এর একটি চিত্র উঠে আসবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *