বরিশাল অফিস :: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের প্রিজন সেলে এক আসামিকে অপর আসামি পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম। এরআগে রোববার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক জানিয়েছে।
তিনি জানান, মামলার বাদী হয়েছেন বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. নুর-ই আলম সিদ্দিকী। নমামলার আসামী টুয়াখালী গলাচিপা থানার হত্যা মামলার আসামি তরিকুল ইসলাম (২৫)। সে একই থানা এলাকার কলাগাছিয়া গ্রামের মোশারেফ সিকদারের ছেলে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক জানান, রোববার রাতে ডেপুটি জেলার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামির বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টাসহ গুরুতর ও সাধারণ জখম করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার আসামি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাই তাকে শ্যেন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।
মামলার বরাতে তিনি আরও জানান, আসামি তরিকুল ইসলামকে পটুয়াখালী কারাগার থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৬ এপ্রিল বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তাকে বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠানো হয়।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন ১৪ এপ্রিল সকালে প্রিজন সেলে তরিকুল ইসলাম অপর দুই আসামি মোতাহার ও অজিত কুমার মণ্ডলের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে তরিকুল উত্তেজিত হয়ে হত্যা করার উদ্দেশে স্যালাইনের স্ট্যান্ড দিয়ে মোতালেব ও অজিতকে পিটিয়েছে। কারারক্ষীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে নিয়ে আহত দুই আসামীকে ভর্তি করে। এর মধ্যে মোতাহের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
অথচ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আসামি হত্যা মামলার আসামি তরিকুল ইসলাম মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিল। তাকে মানসিক ওয়ার্ডে না রেখে কারা কর্তৃপক্ষ অন্য আসামিদের সঙ্গে প্রিজন সেলে রাখেন। যেখানে রোববার ভোরে তরিকুল ইসলামের হামলার শিকার হন অপর দুই আসামি মোতাহার ও অজিত কুমার মণ্ডল। আর ঘটনার সময় প্রিজন সেলের কাছাকাছি যে কারারক্ষীরা ছিলেন তাদের কাছে চাবি ছিল না। যার কাছে চাবি তিনি হাসপাতালের বাইরে অবস্থান করছিলেন। ফলে তাৎক্ষণিক হামলাও প্রতিহত করা যায়নি। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
যদিও বরিশাল জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা তদন্তে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়কে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর জেলার মোহাম্মাদ জয়নাল আবেদীন ভূঞা জানান, তিনি এ বিষয়ে কোনো কথাই বলবেন না, যা দরকার স্যারদের কাছ থেকে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। অপরদিক মামলার বাদী ডেপুটি জেলার মো. নুর-ই-আলম সিদ্দিকীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানান।
তবে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে আসামি খুনের ঘটনায় দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে কমিটিও গঠন করা হয়েছে।